সব্যসাচী দত্ত।
বিদ্যুৎ-কর্মীদের একটি ইউনিয়নের সম্মেলনে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বক্তৃতা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। নবান্নের একটি সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনদিন আগের ওই সম্মেলনে কর্মীদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সব্যসাচী রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার চেয়ারম্যান সম্পর্কে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ‘ঠান্ডা ঘরে বসে থাকেন’ বলে কটাক্ষ করেন। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর ‘কানে তুলো গুঁজে’ রাখার চেষ্টা হলে তিনি সেই তুলো খুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন বলেও হুমকি দেন। ইউনিয়নটির সভাপতি মদন মিত্র। ওই বক্তৃতার সময় তিনিও মঞ্চে ছিলেন। কোনও প্রতিবাদ করেননি।
এ দিকে সব্যসাচীর এই ভূমিকার সমর্থনে শনিবার মুখ খোলেন বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুল রায়। তিনি বলেন, ‘‘সব্যসাচী শ্রমিক আন্দোলন করে, অনেক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে মেয়র হয়েছেন। ওঁর ঘাড়ে এখন অনেকেই নিশ্বাস ফেলছে। তবে উনি যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। বাংলার মানুষের স্বার্থে কথা বলেছেন।’’ মুকুল তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ ছিলেন সব্যসাচী। সব মিলিয়ে তাই বিষয়টি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়ে যায়। প্রকাশ্যে তৃণমূলের কেউ মুখ না খুললেও দলের অন্দরে শুরু হয় গুঞ্জন। রাজ্যের এক শীর্ষ স্থানীয় আমলা সম্পর্কে প্রকাশ্যে এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ আনার জন্য অফিসারমহলেও ক্ষোভ ছড়ায়।
সব্যসাচী অবশ্য শনিবারও নিজের বক্তব্যে অনড়। তবে নবান্ন সূত্রে জানা যায়, মদন ও সব্যসাচীকে মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁরা কেউই সে কথা স্বীকার করেননি। তবে সুর নরম করে এ দিন তাঁরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে যাবেন। মদন জানান, তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যানেরও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজেশ পাণ্ডের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। যখন মন্ত্রী ছিলাম, একসঙ্গে কাজ করেছি।’’ সব্যসাচীর বক্তব্য, ‘‘আমার বক্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে দুঃখিত।’’
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেববাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছর রাজনীতি করছি। বিদ্যুৎকর্মীদের ইউনিয়নও আমিই করেছি। ঠান্ডা ঘরে বসে মন্ত্রিত্ব চালাই কি না, তা সবাই জানেন। এর বেশি কিছু বলব না।’’ সব্যসাচীর বক্তৃতার বিরোধিতা না করে মদনের সাফাই, ‘‘ও আবেগের বশে এ সব বলে ফেলেছে। কর্মীদের অনেক দিনের দাবিদাওয়া আছে। সেটাই আবেগের কারণ।’’ সব্যসাচীরও বক্তব্য, ‘‘আমি কর্মীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বলেছি। কারণ, ওঁরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে নিজেদের প্রাপ্য চাইছেন।’’