মিড-ডে মিলে পঞ্চায়েত যোগ নিয়ে বিতর্ক

রাজ্যে স্কুলস্তরে দুর্নীতির সব থেকে বেশি অভিযোগ ওঠে মিড-ডে মিল প্রকল্পকে ঘিরে। সেই দুর্নীতি রুখতে এবং খাবারের মান যাচাইয়ের জন্য একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা দফতর।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০০:১৯
Share:

মিড-ডে মিল নিয়ে দুর্নীতি রোধে এবং খাবারের মান উন্নয়ন করতে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের স্কুল পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে যুক্ত করতে উদ্যোগী হল স্কুলশিক্ষা দফতর। সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরে এই সংক্রান্ত আবেদনও করা হয়েছে বলে জানান দফতরের এক কর্তা। তবে পঞ্চায়েত সদস্যদের এই অন্তর্ভুক্তিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলি শাসক দলের দখলে রয়েছে। তাই শাসক দলের সদস্যদের এড়িয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডি আই), এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) কতটা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি, এই পদক্ষেপে দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ হল বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

রাজ্যে স্কুলস্তরে দুর্নীতির সব থেকে বেশি অভিযোগ ওঠে মিড-ডে মিল প্রকল্পকে ঘিরে। সেই দুর্নীতি রুখতে এবং খাবারের মান যাচাইয়ের জন্য একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা দফতর। ডি আই, বিডিও, স্কুল ইনস্পেক্টররা রয়েছেন ওই পরিদর্শন কমিটিতে। গত কয়েক মাসে দুই বর্ধমান, উত্তর দিনাজপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় পরিদর্শন করে ওই দলটি। পরিদর্শনে বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলিতে নানা অব্যবস্থার চিত্র সামনে এসেছে বলে জানাচ্ছেন দফতরের এক কর্তা। দ্রুত সেই পরিস্থিতি বদলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দফতরের তরফে। কিন্তু পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের মতো পরিষেবায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে দফতর। পরবর্তী পর্যায়ে পুর এলাকায় কাউন্সিলরদের এই কমিটির সঙ্গে যুক্ত করতে পুর দফতরে আবেদন করা হবে।

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, মিড-ডে মিলে যে ভাবে অব্যবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা আটকাতে স্থানীয় স্তরের মানুষের সক্রিয়তার প্রয়োজন। বিকাশ ভবন এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে এ বিষয়ে নজরদারি চালানোর পরেও কিছু ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন দফতরের কর্তারা। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও কাউন্সিলরদের পক্ষে এলাকার স্কুলগুলিতে নজরদারি করা অনেক সহজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তায় তৃণমূল স্তরেই দুর্নীতি আটকানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দফতরের কর্তারা। শিক্ষক মহল অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, স্কুলের পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত সদস্যরা থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা শাসক দলের স্থানীয় নেতা। কিন্তু তার পরেও স্কুলে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখানে ফের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করার যৌক্তিকতা কোথায়? তা হলে কি পরিচালন সমিতির জন প্রতিনিধিদের উপরে সরকার ভরসা করতে পারছে না?

Advertisement

সিপিআই শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপ আসলে দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ। এতে স্কুল স্তরে দুর্নীতিকে শক্ত ভিতের উপরে প্রতিষ্ঠা করা হল।’’ এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাঁদের দিয়েই শিক্ষকদের সততা যাচাই করার পদ্ধতি লজ্জার।’’

তবে স্কুলশিক্ষা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘কেউই একা স্কুল পরিদর্শন করবেন না। বিডিও, ডিআই-রা সঙ্গে থাকবেন। ফলে এই বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক।’’ তবে, অন্য পরিদর্শকেরা কতটা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন