বন্দি রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পোস্টে বিতর্ক

শনিবার তাঁর নিজের ফেসবুক দেওয়ালে অনন্যাদেবী লিখেছেন, ০-৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু, যারা তাদের মায়েদের সঙ্গে জেলে রয়েছে, তাদের জামাকাপড়, শীতের পোশাক, মশারির প্রয়োজন। পাশাপাশি বিস্কুট, চকলেট, কেকও দিতে পারেন কেউ।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য জামাকাপড় ও শুকনো খাবার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তাঁর এই ভূমিকা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

Advertisement

শনিবার তাঁর নিজের ফেসবুক দেওয়ালে অনন্যাদেবী লিখেছেন, ০-৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু, যারা তাদের মায়েদের সঙ্গে জেলে রয়েছে, তাদের জামাকাপড়, শীতের পোশাক, মশারির প্রয়োজন। পাশাপাশি বিস্কুট, চকলেট, কেকও দিতে পারেন কেউ। যদি কেউ সাহায্য করতে চান, তা হলে উল্টোডাঙায় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের অফিসে তা পৌঁছে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে শাসকপন্থী পার্শ্বশিক্ষক সংগঠনও

Advertisement

এই কমিশনের চেয়ারপার্সনকে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, জেলবন্দি শিশুদের সাহায্যের জন্য তিনি কি প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে পারেন? অনন্যাদেবীর জবাব, ‘‘শিশুরা নিজের দেশ থেকে মায়েদের সঙ্গে চলে এসেছে। এখানে তাদের কোনও আত্মীয় না থাকায় জেলের দেওয়া খাবার ও কাপড়জামার উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। আমার মনে হয়েছে, ওদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাই কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসাবে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্য চাইতেই পারি।’’

তাঁর এই দাবির সঙ্গে অবশ্য একমত নয় নবান্নের একাংশ। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘অনন্যাদেবী যে পদে রয়েছেন সেখান থেকে এমন আবেদন জানানো যায় না। তাঁর কোনও পরামর্শ থাকলে তা সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষ, অথবা সরকারকে জানাতে পারতেন। তিনি ‘অ্যাক্টিভিস্টে’র মতো কাজ করেছেন।’’ ওই কর্তার মতে, ‘‘জেলের কিছু শিশুর জন্য এমন সাহায্য চাওয়ার অর্থ বাকি শিশুদের সঙ্গে বিভেদ তৈরি করা।’’

আর্জি: ফেসবুকে অনন্যা চক্রবর্তীর সেই পোস্ট।

যদিও রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এর মধ্যে কোনও ভুল বা অনিয়ম দেখছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসবের আগে জেলবন্দিদের কেউ জামাকাপড় দিতে চাইলে সেটা ভাল তো!’’ কিন্তু জেলবন্দিদের বাইরের জিনিসপত্র ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে? মন্ত্রী এর উত্তর না দিলেও কারা দফতর সূত্রের খবর, পুজো বা বিশেষ অনুষ্ঠানের আগে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা ব্যক্তি সাহায্য দিতে চাইলে দফতরে এসে যোগাযোগ করেন। সে ক্ষেত্রে সকলের মধ্যে সাহায্য বিলিয়ে দেওয়া হয়। আলাদা করে কয়েক জনের জন্য তা করা যায় না।

শুধু দমদম নয়, এ রাজ্যে আরও কয়েকটি সংশোধনাগার এবং হোমে রোহিঙ্গা মা এবং তাঁদের শিশুরা রয়েছেন গত দেড়-দু’বছর ধরে। সংশোধনাগারের নিয়ম মেনে তাঁদের পোশাক ও খাবার দেওয়া হয়। দমদমে প্রায় একশো জন শিশু রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১৭ জন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। এই শিশুদের কি ঠিকমতো দেখভাল করেন না জেল কর্তৃপক্ষ? অনন্যাদেবীর অবশ্য এমন কোনও অভিযোগ নেই। তা হলে আপনার পরামর্শ তো সরকারকেই দিতে পারতেন? অনন্যাদেবীর দাবি, অনেকে এ ধরনের সাহায্য করতে চান। তাঁদের কাছে পৌঁছনোর জন্যই তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছেন।

এ বিষয়ে কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অশোকেন্দু সেনগুপ্ত জানান, অনন্যাদেবী মানবতার খাতিরে এই ‘পোস্ট’ করলে কিছু বলার নেই। কিন্তু কমিশনের ইতিহাসে এমন ঘটনার কথা শুনিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন