ছবি-মন্তব্যে স্ববিরোধ, মুকুলকে কি ফের জেরা?

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এই বিষয়ে মুকুলের বক্তব্য, সুদীপ্ত সেন এখন জেলে বলে এক কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ছবি কেনার লোক পাওয়া যায় না। তাই মুখ্যমন্ত্রী এখন আর ছবিই আঁকছেন না।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:০০
Share:

মুকুল রায়। ফাইল চিত্র।

বক্তা এক জন। বিষয় একটিই। কিন্তু বক্তব্য দু’রকমের। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের সেই দুই উক্তি পরস্পরবিরোধী।

Advertisement

বক্তার নাম মুকুল রায়। তৃণমূলে থাকাকালে তাঁর বক্তব্য ছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন কিনেছেন, এই তথ্য ভুল। মিথ্যা।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এই বিষয়ে মুকুলের বক্তব্য, সুদীপ্ত সেন এখন জেলে বলে এক কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ছবি কেনার লোক পাওয়া যায় না। তাই মুখ্যমন্ত্রী এখন আর ছবিই আঁকছেন না।

Advertisement

স্ববিরোধ স্পষ্ট। তাই মুকুলকে আবার তলব করে জেরা করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে সিবিআইয়ে।

২০১৭-র নভেম্বরে বিজেপিতে যোগদানের পরে স্বাভাবিক ভাবেই পুরনো দলের সমালোচনায় নামেন মুকুল। সেটা রাজনৈতিক তাগিদেই। কিন্তু সিবিআইয়ের বক্তব্য, যে-বিষয়ে মুকুলের এই ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন, সেই ছবি কেনাবেচা নিয়ে তদন্ত চলছে। সারদা নিয়ে মূল অভিযোগের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনার বিষয়টি আছে। অভিযোগ, এক কোটি ৭৬ লক্ষ টাকায় সুদীপ্ত তাঁর একটি ছবি কেনেন। সিবিআইয়ের জেরায় সুদীপ্ত ছবি কেনার বিষয়টি স্বীকারও করে নেন। মমতা-ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নকেও ডেকে পাঠিয়ে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিল সিবিআই।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল বলেছিলেন, ‘‘মোদী (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) অভিযোগ করেছেন মমতার আঁকা ছবি নাকি এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, হয় তিনি এটা প্রমাণ করুন অথবা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিন। এটা মিথ্যা। মমতার চরিত্রহননের জন্যই এটা বলা হচ্ছে।’’ ২০১৫-র ৩০ জানুয়ারি সেই মুকুলকে সিবিআই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে দীর্ঘ ক্ষণ জেরা করে। সিবিআইয়ের দাবি, সেই সময়েও ছবি কেনা নিয়ে মুকুল জানান যে, অভিযোগ মিথ্যা।

কিন্তু মাসখানেক আগে বিজেপি নেতা হিসেবে সেই মুকুলই একটি জনসভায় মমতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আপনি আঁচড় কাটলেই নাকি ৫০ লক্ষ টাকা! সেই এক কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার ছবি কোথায় গেল? এখন ছবি আঁকেন না কেন? সুদীপ্ত সেন জেলে, তাই? কেনার লোক নেই?’’
মুকুলের এই উক্তির ভিডিয়ো সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।

সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে যাওয়া সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে সেই ভিডিয়ো।

সাধারণত, কোনও মামলায় কারও দু’রকম বক্তব্য থাকলে তাঁকে পুনরায় ডেকে জেরা করার কথা। মুকুলকেও কি ডেকে ফের জেরা করা হবে? এক সিবিআই-কর্তার জবাব, ‘‘এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

কী বলছেন মুকুল নিজে?

‘‘২০১৫ সালে আমাকে যখন জেরা করা হয়েছিল, ছবি নিয়ে আমি কিছু বলিনি। সেই বিষয়ে আমাকে কোনও প্রশ্ন করাও হয়নি। তা ছাড়া ছবি বিক্রির বিষয়টি আমি দেখতাম না,’’ বলছেন মুকুল। কিন্তু সেই সময় তৃণমূলের আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটা তো আপনিই দেখতেন? মুকুলের জবাব, ‘‘ছবি বিক্রির টাকার জন্য আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। সেটা আমি দেখতাম না।’’

মুকুলের দাবি অনুযায়ী তিনি সিবিআইয়ের সামনে কিছু না-বললেও সেই সময় সাংবাদিক বৈঠকে তিনি যে ছবি বিক্রির খবর ‘মিথ্যা’ বলে জানিয়েছিলেন, তার ভিডিয়ো রয়েছে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। একই বিষয়ে দু’টি বিপরীত বক্তব্য নিয়ে সিবিআই এখন ধন্দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন