অনলাইনেও কমছে না গোলমালের ভয়

উদ্দেশ্য ছিল কলেজের ছাত্রভর্তি নিয়ে ফি-বছরের চেনা গোলমাল এড়ানো এবং গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফেরানো। তা সফল করতে বিকল্প ছিল কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি। সে কথা একবাক্যে স্বীকার করে এসএফআই, সিপি, এবিভিপি-সহ সব বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্রভর্তিতে স্বচ্ছতা থাকে, মেনে নিচ্ছে টিএমসিপিও।

Advertisement

পিনাকী গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:০১
Share:

অনলাইনে ভর্তির জন্য লাইন। মেদিনীপুর গোপ কলেজে। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্দেশ্য ছিল কলেজের ছাত্রভর্তি নিয়ে ফি-বছরের চেনা গোলমাল এড়ানো এবং গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফেরানো। তা সফল করতে বিকল্প ছিল কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি। সে কথা একবাক্যে স্বীকার করে এসএফআই, সিপি, এবিভিপি-সহ সব বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্রভর্তিতে স্বচ্ছতা থাকে, মেনে নিচ্ছে টিএমসিপিও।

Advertisement

এই অবস্থায় কলেজে কলেজে অনলাইন চালুতে আপত্তি না করেও কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে সায় দেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যার নিট ফল, এ বারও চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অনলাইন। তবে কল্যাণী, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর এবং বারসতের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রায় সব কলেজেই থাকছে অনলাইনে ছাত্রভর্তির ব্যবস্থা।

তাতে কী হতে পারে, কী পারে না? রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনলাইনের সুবাদে প্রবল গরমে দীর্ঘ লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়ার ঝক্কি কমবে, এটুকুই। শহর বা মফস্‌সলে যে এলাকায় সাইবার ক্যাফে রয়েছে কিংবা কলেজে উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে সেখানে শুধু সুবিধে মিলবে।

Advertisement

তবে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু না হওয়ায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা আসতে পারে। কলেজগুলিতে আলাদা আলাদা ভর্তির সুযোগ নিয়ে এক-এক জন পড়ুয়া তিন-চারটে আসন আটকে রাখতে পারে। শেষমেশ পছন্দ মতো একটা কলেজে ভর্তি হয়ে বাকিগুলো ছেড়ে দেবে। তাতে সব আসনে ভর্তি শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে হলেও শেষে একাধিক ওয়েটিং লিস্ট বের করতে হবে! সেখানে ছাত্র সংগঠগুলির হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তাতে বাড়বে জটিলতা। উঠবে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন। কলেজের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকের মত, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু হলে আসন আটকে রাখার প্রবণতায় রাশ টানা যেত।

কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তিতে যে পরিকাঠামো বা সফ‌্টওয়্যার লাগে, তা এমন কিছু উঁচু প্রযুক্তি নয়। দু’বছর আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তা অল্প সময়ে নির্ভুল ভাবে করে দেখিয়েছে। অনলাইন পদ্ধতিতে জটিলতা যেমন কম, তেমন নিরাপত্তা বেশি। প্রযুক্তিগত বিভ্রাট ঘটলে তড়িঘড়ি সারিয়ে ফেলাও সম্ভব—বলছেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক।

এত সুবিধে যখন রয়েছে তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তা চালু করল না কেন? বিশ্ববিদ্যালগুলির যুক্তি, সেটা তাদের এক্তিয়ারে নেই। সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসল ব্যাপার হল স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রভর্তি। সেটা যে ভাবেই হোক তাকে স্বাগত।’’

এ বারই প্রথম রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে ছাত্র ভর্তির আগে কলেজে সফ্‌টওয়্যার ডেভেলপমেন্টে প্রায় দু’লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। এই বছরের প্রথম দিকে সেই টাকা কলেজে কলেজে পৌঁছেছে। সেই টাকাতেই ছাত্রভর্তির জন্যে কলেজগুলি বিশেষ সফ্‌টওয়্যার তৈরি করেছে। ওই টাকাতেই কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু করা যেত বলে মনে করেন অনেকেই।

এ বারও ছাত্রভর্তিতে গোলমাল ও অশান্তির আশঙ্কা করছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। গোটা ভর্তি প্রক্রিয়ায় আদৌ কতটা স্বচ্ছতা থাকবে তা নিয়েও ধন্দে তারা। এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়ের অভিযোগ, ‘‘নিজেদের ছাত্র সংগঠনের (টিএমসিপি-র) স্বার্থের কথা ভেবেই কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু করতে ইতস্তত করছে রাজ্য সরকার। সরকারই টিএমসিপি কর্মীদের টাকা লুঠের সুযোগ করে দিচ্ছে।’’ অনলাইন চালুর পরেও কলকাতার দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজের টিএমসিপি-র দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই মত ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের।

ছাত্র ভর্তিতে অনলাইনের দাবি তুলে প্রথম আন্দোলনে নেমেছিল এবিভিবি। শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে সল্টলেকের বিকাশ ভবনে সংগঠনের কর্মীদের লাঠির বাড়ি জুটেছিল। সংগঠনের দুই মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক তথা কার্যকরী কমিটির প্রদেশ সদস্য অসীম মিশ্রের ক্ষোভ, ‘‘এই বার অনেক বেশি কলেজে অনলাইন চালু হয়েছে। কিন্তু, বিচ্ছিন্ন অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারের নিয়ন্ত্রণ কোথায়?’’ টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের অস্বচ্ছতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মত, অনলাইনে ভর্তি চলছে এ বার এমন কলেজের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এটা রাজ্য সরকারেরই কৃতিত্ব। তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু হলে তাকে স্বাগত। তার সম্ভাবনা নিশ্চয়ই সরকার ভেবে দেখেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন