চেনা বিরিয়ানির অচেনা স্বাদ, ধন্দে বহরমপুর

নাম দিয়ে যায় চেনা। নাকি, নামে কিছু আসে-যায় না? বিরিয়ানি নিয়ে এমনই ধন্দে পড়েছে বহরমপুর। রমজান শুরু হতেই শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে গোটা দশেক বিরিয়ানির দোকান। তাদের নাম কলকাতার নামীদামি বিরিয়ানির দোকানের সঙ্গে এক।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০৩:১১
Share:

বহরমপুরে এ সব নামেই বিকোচ্ছে বিরিয়ানি। — নিজস্ব চিত্র।

নাম দিয়ে যায় চেনা। নাকি, নামে কিছু আসে-যায় না?

Advertisement

বিরিয়ানি নিয়ে এমনই ধন্দে পড়েছে বহরমপুর। রমজান শুরু হতেই শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে গোটা দশেক বিরিয়ানির দোকান। তাদের নাম কলকাতার নামীদামি বিরিয়ানির দোকানের সঙ্গে এক।

তা দেখে পরিবার নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার বাসিন্দা সানি বিশ্বাস। বললেন, ‘‘নাম দেখে বিরিয়ানি খেতে গিয়ে খুব ঠকেছি মশাই। স্বাদ মোটেই কলকাতার ওই দোকানের বিরিয়ানির মতো নয়।’’ কেবল গজগজ করেই ক্ষান্ত হননি বহরমপুরের বাসিন্দারা। অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন পুরসভায়। বহরমপুরের পুরপ্রধান কংগ্রেসের নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘এই নিয়ে আমরাও বেশ কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। তাছাড়া ওঁরা ব্যবসা করার জন্য পুরসভার কাছ থেকে কোনও অনুমতিও নেননি।’’ তিনি জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই ওই ব্যাপারে একটা তদন্ত কমিটিও তৈরি করেছেন।

Advertisement

কলকাতার নামী দোকানের নামে বহরমপুরের বিরিয়ানি দোকানের নাম রাখা অপরাধ, তা মানতে নারাজ বহরমপুরের দোকান মালিকরা। ওই দোকান মালিকদের একজন কলকাতার বাসিন্দা মহম্মদ সাহেব কবুল করছেন, ‘‘কলকাতার নামী বিরিয়ানি সংস্থার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।’’ তাহলে তাদের নাম ব্যবহার করছেন কেন? সাহেব বলছেন, ‘‘নামী মানুষের নাম শুনে আমরা আমাদের সন্তানদের নাম রাখি। তেমনি ওই নামগুলি পছন্দ হয়েছে, তাই রেখেছি।’’ তাঁর যুক্তি, একই গ্রামে পাঁচজনের একই নাম হতে পারে। তাহলে রেস্তোরাঁয় বাধা কোথায়?’’

নীলরতনবাবু অবশ্য এ যুক্তি মানতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘এ তো রীতিমতো অপরাধ। একই নাম ব্যবহার করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ওঁরা ব্যবসা করছেন।’’ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানান তিনি।

ঈদের মরসুমে বহরমপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তার পাশেই ভাড়া নেওয়া হয়েছে ছোট ছোট ঘর। দোকানের সামনে রাখা থাকছে লাল কাপড়ে ঢাকা বিরিয়ানির পাত্র। ভিতরে সস্তার চেয়ার টেবিল। বেসিন থেকে বসার জায়গা, সবেতেই পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। কেবল কাউন্টারের উপরে ফ্লেক্সে লেখা থাকছে বিভিন্ন নামী বিরিয়ানি দোকানের নাম।

মজা হল, সব দোকানের বিরিয়ানিই রান্না হচ্ছে একই জায়গায়। দোকানের কর্মীদের থেকে খবর পেয়ে দুপুর দুটো নাগাদ বহরমপুরের গির্জার মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একেবারে পাশেই ছোট্ট একটি ঘরে চলছে রান্না। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে, রাস্তার নলকূপের জলে রান্না চলছে। সেখান থেকেই নানা কাউন্টারগুলিতে সেই বিরিয়ানি, মাংস-সহ অন্যান্য পদ সরবরাহ করা হয়, জানালেন রাঁধুনিরা। রাঁধুনি, দোকান-কর্মী মিলিয়ে জনা তিরিশেক লোক চালাচ্ছেন এই হঠাৎ-গজানো বিরিয়ানির দোকানগুলি। বিরিয়ানির দাম ৬০ টাকা-১১০ টাকা।

বহরমপুরেও কি আপনারা দোকান খুলেছেন? প্রশ্নটা শুনে কলকাতার এক নামী বিরিয়ানি সংস্থার ম্যানেজার বলছেন, ‘‘কলকাতা, সল্ট লেকের বাইরে অন্য কোনও জেলাতে আমাদের দোকান নেই।’’ আর একটি বিরিয়ানি সংস্থার ম্যানেজারও জানাচ্ছেন, কলকাতার বাইরে তাঁদের কোনও শাখা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বিরিয়ানির হাঁড়ি নিয়ে গিয়ে ফুটপাথে বসার প্রশ্নই ওঠে না।’’

কলকাতার বিরিয়ানি ভেবে তবে কী খাচ্ছে বহরমপুর?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন