অনেক শাড়ি জ্যালজেলে। কিছু কিছু আবার ছেঁড়াও। অনেক ক্ষেত্রে আবার সালোয়ার ছিল তো কামিজ ছিল না!
এই বিপত্তি বেধেছে ইদে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া জামাকাপড় নিয়ে। অর্থাৎ উৎসবে নববস্ত্র দানের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে মান নিয়ে প্রশ্নের চোরকাঁটা। অনুযোগ এসেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বিধায়কদের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বুধবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রতবাবু জানান, ইদের আগে জেলায় জেলায় যে-সব জামাকাপড় বিলি করা হয়েছে, তার বেশ কিছু নিম্ন মানের বলে বিধায়কেরা জানিয়েছেন। শুনেই সবিস্তার তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খানকে তিনি জানিয়ে দেন, তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
ট্র্যাডিশনটা ছিলই। প্রতি বছর ইদ ও দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যের কিছু মানুষকে জামাকাপড় দেওয়ার প্রথা চালু করেছিল আগেকার বাম সরকার। ক্ষমতার হাতবদলের পরে তা বন্ধ হয়নি। বরং আরও বেশি মানুষকে এই প্রথার আওতায় আনতে জোর দেন মমতা। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু সেই দানের কাপড়েও এখন অনুযোগের কাঁটা!
প্রশ্ন উঠছে, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এর তদন্ত করবে কেন?
নবান্নের খবর, ইদ ও দুর্গোৎসবের আগে জামাকাপড় কেনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উপরেই। সাধারণ ভাবে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার জামাকাপড় কেনে তারা। এই কাজের জন্য ওই দফতরের অধীনে একটি কমিটিও আছে। তারাই জামাকাপড় কেনার বরাত দেয়। শুধু কাপড় কেনা নয়, টাকাও জোগান দেয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। সেই জন্য তাদেরই তদন্ত করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী তাঁর সচিবকে ফোন করে কোন কোন জেলা থেকে খারাপ জামাকাপড় বিলির অনুযোগ এসেছে, তার খোঁজ নিতে বলেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনের বাইরের কোনও বিশেষজ্ঞকে দিয়ে বিলি করা জামাকাপড়ের মান পরীক্ষা করারও নির্দেশ দেন তিনি।’’
নবান্নেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কাপড়জামা কিনলেও বিলির দায়িত্ব তাদের নয়। বিধায়কদের মাধ্যমে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইদ ও দুর্গাপুজো মিলিয়ে এক-এক জন বিধায়ককে ২০ লক্ষ টাকার জামাকাপড় দেওয়া হয়। এর জন্য কোটাও বেঁধে দিয়েছে সরকার। যেমন এ বার বিধায়ক-পিছু ১০০ লুঙ্গি, ৩০০ শাড়ি, ২০০ ধুতি, ৩০০ চাদর, ২০০ চুড়িদার এবং ২০০ পাঞ্জাবি-পাজামা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ইদের দিন দশেক আগে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিধায়কদের কাছে। কিন্তু বিলি করার সময়েই ধরা পড়ে, বেশ কিছু জামাকাপড় নিম্ন মানের। প্রশাসনের খবর, দানের কাপড়ে সব চেয়ে বেশি গলদ ধরা পড়েছে নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়।
মন্ত্রিসভার এ দিনের বৈঠকে দানের সেই সব নিম্ন মানের জামাকাপড় নিয়েই সরব হন সুব্রতবাবু। তাঁকে বিষয়টি তুলতে দেখে গলা মেলান আরও কিছু মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী তখনই তদন্তের নির্দেশ দেন।