খণ্ড যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের অনড় মনোভাব দেখেই ময়দান ছেড়ে গ্রেটার কোচবিহারের নেতা বংশীবদন বর্মন পালিয়ে গিয়েছেন কি না, তা নিয়ে সংগঠনের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে নিউ কোচবিহার স্টেশনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেখা যায় বংশীবাবুকে। এর পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পুলিশ অভিযানের সময় তিনি সেখানে ছিলেন না।
বংশীবাবু অবশ্য ময়দান ছেড়ে পালানোর কথা মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতে তিনি সেখান থেকে বাইরে যান। গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বংশীবদনবাবু বলেন, “বৈঠক করে আন্দোলন তুলে নেওয়ার নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরেই আমরা ওই কথা ঘোষণা করি। এরমধ্যেই পুলিশের অভিযানের কথা জানতে পারি। এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার নেই।” কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “শুরু থেকে অবরোধ তুলে নিতে বহুবার প্রস্তাব পাঠানো হয়। সোমবার বৈঠকেও ওদের বোঝানো হয়। কাজ হয়নি। ফলে আমাদের কাছে অন্য বিকল্প ছিল না।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা পরে জানানো হয়েছে। এর কোনও অর্থ হয় না।”
নিউ কোচবিহার স্টেশনে গ্রেটার সমর্থকদের হঠাতে কাঁদানে গ্যাস।
পুলিশ সূত্রের খবর, পৃথক রাজ্যের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে নিউ কোচবিহার স্টেশনে অবরোধ শুরু করে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। ওই দিন থেকেই প্রশাসনের তরফে বংশীবাবুর কাছে দফায় দফায় প্রস্তাব পাঠান হয়েছে। ওই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সোমবার জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান আন্দোলনকারীরা। সেখানেও রেল অবরোধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান হয়। বৈঠক থেকে ফিরে গিয়েই আরও কড়া বার্তা দেন গ্রেটার নেতারা। তাঁরা স্পষ্ট জানান, জেলাশসক তাঁদের ধোঁকা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের কোনও প্রতিনিধি না আসলে তাঁরা অবরোধ তুলবেন না। ওই ঘটনার খবর কলকাতায় পৌঁছতেই পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয়ে ওঠে।
রাতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজ কানোজিয়া (উপকূল রক্ষী বাহিনী) কোচবিহারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এডিজি তথা আইজি উত্তরবঙ্গ এন রমেশবাবু, ডিআইজি জলপাইগুড়ি রেঞ্জ রাজেশ যাদব সহ বেশ কয়েকজন আইপিএস অফিসারকে ডেকে আনা হয় কোচবিহারে। গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে বাছাই বাছাই পুলিশ অফিসারদেরও তলব করা হয়। এ দিন সকালেই আইপিএস জয়ন্ত পাল, অংমু গ্যামসো পাল, শিলিগুড়ির এসিপি (ইস্ট) পিনাকী মজুকদার সহ অনেক অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার জেলায় পৌঁছন। ডিজি, আইজি বৈঠকে বসে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আশি ঘণ্টার পর আর অপেক্ষা নয়।
অবরোধকারীদের দিনের মধ্যেই তুলে দেওয়া হবে। নির্দেশ মিলতেই পুলিশ লাইনের মাঠে প্যারেড শুরু হয় পুলিশ কর্মীদের। নিউ কোচবিহারে স্টেশনেও প্যারেড শুরু হয়। অফিসাররা নির্দেশ দেন, আধ ঘন্টার মধ্যে রেললাইন থেকে অবরোধ তুলে দিতে হবে। অভিযুক্তরা কেউ যাতে পুলিশের হাত থেকে পার না পায়, সে ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই খবর পৌঁছে যায় বংশীবদনবাবুর কাছেই। অভিযোগ, পুলিশের ওই অনড় মনোভাব দেখে বংশীবাবু সেখান থেকে সরে যান।
লাইনের ধারে পড়ে থাকা খোয়ার ঘায়ে জখম এক মহিলা অফিসার।
পুলিশের অভিযানের কিছু ক্ষণের মধ্যে বংশীবদনবাবুই আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। সংগঠন নেতৃত্বের ওই ভূমিকা নিয়ে গ্রেটার সমর্থকদের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। আগেভাগে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়ানো যেত বলেও মনে করছেন তাঁরা। পুলিশের হাতে আন্দোলনে সামিল লাঠিপেটা হতে হত না। গোলমালের সময় যাঁর ডাকে গ্রামগঞ্জের সর্মথকরা অবরোধে সামিল হন, সেই বংশীবদনবাবু বেপাত্তা হয়ে যান বলে অভিযোগ।
২০ ডিসেম্বর থেকে নিউকোচবিহার স্টেশনে অবরোধ শুরু করেন জিসিপিএ সমর্থকরা। উত্তরবঙ্গ তো বটেই অসমের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবরোধ তুলে নিতে বার্তা পাঠান। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক অরুন্ধতী দে উদ্যোগী হন। সোমবার জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিতে যান জিসিপিএ নেতারা। তবে সেখানে গরহাজির ছিলেন বংশীবাবু। গ্রেটার সূত্রেই জানা গিয়েছে, সোমবার আন্দোলনকারীরা চড়া রোদে থাকলেও বংশীবাবু দীর্ঘসময় ছিলেন না। বংশীবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘অসুস্থতার জন্য খানিকটা সময় বিশ্রামে থাকতে হয়।’’