ছিন্নমূল/৩

কুপার্সে বাঁচার লড়াইয়ে মনে পড়ছে অসমকে

১৯৫০ সাল। মাত্র আট বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ও পার বাংলা ছেড়েছিলেন অশোক চক্রবর্তী। পরে ঠাঁই হয় রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে। প্রথমে এসে বসবাস করতে শুরু করেন একটি গোডাউনে। পরে এখানেই দোচালা টিনের ঘর করে দেওয়া হয়।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৮
Share:

ফের কি ছাড়তে হবে ভিটেমাটি? সেই প্রশ্ন ঘুরছে কুপার্স ক্যাম্পে। নিজস্ব চিত্র

ও পার থেকে ভিটেমাটি হারিয়ে এসেছিলেন এ পারে। রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেছিলেন। বহু সংগ্রামের পর প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন ওঁরা।

Advertisement

আজ সেই অতীত অনেকে ভুলে গিয়েছেন। এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। যাঁরা যাননি, তাঁদের মনে নতুন করে দুশ্চিন্তা ছড়াতে শুরু করেছে অসমের ঘটনায়।

১৯৫০ সাল। মাত্র আট বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ও পার বাংলা ছেড়েছিলেন অশোক চক্রবর্তী। পরে ঠাঁই হয় রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে। প্রথমে এসে বসবাস করতে শুরু করেন একটি গোডাউনে। পরে এখানেই দোচালা টিনের ঘর করে দেওয়া হয়।

Advertisement

মানুষটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। পরে জড়িয়ে পড়েন উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে। বর্তমানে সন্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের নেতা অশোক বলেন— “অসমের ঘটনায় এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কয়েকজন আমার কাছে এসেছিলেনও। আশ্বস্ত করে বলেছি— সমস্যা হবে না।”

তাঁর থেকেই জানা গেল, ক্যাম্পের ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনা ছাউনি ছিল কুপার্স ক্যাম্পে। সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর বড় গোডাউন, ঘর, হাসপাতাল সবই ছিল। ও পার বাংলা থেকে ভিটেমাটি হারানো মানুষ এসে আশ্রয় পান এখানে। ১৯৯৬ সালে এটি ১২ আসন বিশিষ্ট কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েড হিসাবে ঘোষিত হয়।

দশ বছর বয়সে দাদার সঙ্গে এই ক্যাম্পে পা রাখেন জিতেন্দ্রনাথ মাঝি। নোটিফায়েডের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বসে জিতেন্দ্রবাবু বলছেন, “চোখের সামনে দেখেছি! কুপার্সকে শহর স্বীকৃতির দাবিতে লড়াই করেছি। আজ শহরের স্বাদ পাচ্ছি।” তবে এত কিছুর পরেও তাঁর মন থেকে শঙ্কা কাটছে না— “আবার একটা ঝড় আসছে বলে
মনে হচ্ছে।”

পাঁচ বয়সে মায়ের কোলে এ দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন হরিদাস বণিক। কুপার্স ক্যাম্পে বসবাস। আর্থিক কারণে বেশি দূর লেখাপড়া হয়নি। মাইকের ব্যবসা শুরু করেন। হরিদাস বলছেন, “আমার কাছে রিফিউজির প্রমাণপত্র রয়েছে। আমাকে তাড়ানোর আশঙ্কা নেই।’’

তবে, চিন্তায় আছেন অনেকেই। কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েডের চেয়ারম্যান শিবু বাইন বলেন, “কাগজ দেখতে চাওয়া হলে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষ দেখাতে পারবেন না।’’ অতীতের সঙ্গে লড়াই করে, কোনও ক্রমে টিকে যাওয়া মানুষগুলি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁদের বর্তমান নিয়ে। অসমের ঘটনা তাঁদেরকে ভাবতে
বাধ্য করছে।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন