ছবি: এএফপি।
এ বার খোদ চিকিৎসকই আক্রান্ত হলেন করোনাভাইরাসে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আলিপুরে সেনার কম্যান্ড হাসপাতালের এক চিকিৎসকের লালারসের নমুনা পরীক্ষার পর পজিটিভ পেয়েছেন নাইসেডের বিশেষজ্ঞরা। তিনি এই মুহূর্তে সেনার কম্যান্ড হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। রাজ্যে এই প্রথম কোনও চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হলেন। এই চিকিৎসক ছাড়াও বরাহনগর এবং শেওড়াফুলির দুই ব্যক্তিরও রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।ফলে সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১।
৫২ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক ছাড়াও ৬৬ বছরের এক প্রৌঢ়ের লালা রসের নমুনাও পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। ওই প্রৌঢ় বরাহনগরের বাসিন্দা। সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের জন্য গত ২৬ মার্চ লেকটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। শনিবার তাঁর রিপোর্টে পজিটিভ আসে। তাঁর ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
এ দিনের তৃতীয় পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ৫৯ বছরের ব্যক্তির দেহে। তিনি হুগলির শেওড়াফুলির বাসিন্দা। ২৮ মার্চ সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁর হাইপারটেনশন এবং ডায়াবিটিস রয়েছে। জানা গিয়েছে, গত ১৬ মার্চে তাঁর জ্বর আসে। তার পর কমেও যায়। ফের ২০ মার্চ জ্বর আসে। রবিবার তাঁর লালারসের নমুনার রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। চাঁদনিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এই প্রৌঢ়। ১৩ মার্চ দুর্গাপুর গিয়েছিলেন। এর পর মথুরাপুরে যান। সেখান থেকে ফেরার পর ফের জ্বর আসে তাঁর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই নাইসেডের পক্ষ থেকে ওই চিকিৎসকের রিপোর্ট তাঁদের কাছে এসেছে। ওই চিকিৎসক অ্যানাস্থেশিওলোজিস্ট। তিনি সেনা হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান। তবে কী ভাবে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য পাননি স্বাস্থ্য কর্তারা। ওই চিকিৎসকের কোনও বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে কি না তাও এখনও স্পষ্ট নয়।
এই চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদের। কারণ, চিকিৎসকদের মধ্যে অ্যানাস্থেশিওলোজিস্টরা রোগীদের খুব কাছাকাছি যান। সেখান থেকে রোগীর সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। সেই কারণে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কম্যান্ড হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই চিকিৎসক কোন কোন রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ওই চিকিৎসক দিল্লি গিয়েছিলেন। ১৬ মার্চ দিল্লি থেকে ফিরেছেন। পরের দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ তিনি সেনা হাসপাতালে কাজে যোগ দেন। ২১ মার্চ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত কাজ করেছেন সেনা হাসপাতালে। এর পর থেকেই তিনি অসুস্থ হন। সর্দি, জ্বরের সঙ্গে শ্বাস কষ্টের মত উপসর্গ দেখা যায়। তাঁকে কম্য়ান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রথমে চিকিৎসকরা নিউমোনিয়া বলে সন্দেহ করেন। নিউমোনিয়ার জন্যই ফুসফুসে সংক্রমণ এবং শ্বাস কষ্ট বলে সন্দেহ করেন তাঁরা। কিন্তু চিকিৎসার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ওই চিকিৎসকের লালা রসের নমুনা পাঠানো হয় নাইসেডে পরীক্ষার জন্য। সেনা হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রথম থেকেই তাঁকে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন: ‘ঘরবন্দি থাকবেন না ইটালি হতে দেখবেন’
আরও পড়ুন: অবাধ মেলামেশা তেহট্টের করোনা আক্রান্তের পরিবারের
স্বাস্থ্য দফতরেরে এক কর্তা বলেন, সেনা হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের পরিবার এবং তাঁর সংস্পর্শে আরও যাঁরা যাঁরা এসেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত কোয়রান্টিনে রেখে পর্যবেক্ষনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে খোঁজ করা হচ্ছে, তিনি সেনা হাসপাতালের বাইরে অন্য কোথাও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কি না?
প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা আক্রান্ত চিকিৎসকের দিল্লি-যোগ খতিয়ে দেখছেন। দিল্লিতে তিনি কাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক স্বাস্থ্য কর্তা। ওই চিকিৎসক যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের কারওর বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘ প্রাথমিক ভাবে এটা পরিষ্কার যে সংক্রামিত হওয়ার পর তিনি অন্তত চারদিন তিনি সেনা হাসপাতালে গিয়েছেন এবং রোগী থেকে শুরু করে সহকর্মীদের সংস্পর্শেও এসেছেন। ফলে অনেক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি।” ওই চিকিৎসক যে রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভবনাও উড়িয়ে দিতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর। ফলে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাহিনীর দু’জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। দু’জনেরই ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। একজন কলকাতায় কর্মরত কর্নেল পদমর্যাদার চিকিৎসক এবং দ্বিতীয়জন দেহরাদূনে কর্মরত জুনিয়র কমিশনড অফিসার। সেনার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছে। তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন তা চিহ্নিত করে আইসোলেশনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)