Migratory Labourer

পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু, আতঙ্কে দূরে পড়শিরা

সেখানে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দিন পাঁচেক আগে গ্রামে ফেরেন। তারপরেই তাঁর জ্বর-শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

রাস্তা ব্যবহার না করে মাঠের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতদেহ। শনিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা

জ্বর-শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার লোক মিলল না। করোনা আতঙ্কে সরে রইলেন পড়শিরা। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরে, শনিবার দুপুরে হাওড়ার উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের কমলাচক-কালীতলা গ্রামের সঞ্জয় দাস (৪০) নামে ওই যুবকের দেহ দাহ করলেন আত্মীয়েরা। কোনও মৃত্যুর শংসাপত্র ছাড়াই। এ দিন অবশ্য দু’এক জন গ্রামবাসী এগিয়ে এসেছিলেন। তবে, মূল রাস্তা ছেড়ে ধানজমি দিয়ে দেহ নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

Advertisement

বিডিও অতনু দাস জানিয়েছেন, কী কারণে মৃত্যু হল এবং ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়াই কী ভাবে দাহ হল সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় দিল্লিতে জরির কাজ করতেন। গত বছর লকডাউনের সময় বাড়ি ফিরেছিলেন। মাস তিনেক আগে আবার দিল্লি চলে যান। সেখানে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দিন পাঁচেক আগে গ্রামে ফেরেন। তারপরেই তাঁর জ্বর-শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের লোকজন তাঁকে গত সোমবার আমতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করে। শুক্রবার সঞ্জয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। পরিবারের লোকজন সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময়েই রাস্তায় সঞ্জয় মারা যান।

মৃতদেহ আর ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পুলিশকেও জানানো হয়নি। রাত ৭টা নাগাদ দেহ বাড়িতেই নিয়ে আসা হয়। পড়শিদের দাবি, মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলেও সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ও দেখাতে পারেননি। ফলে, তাঁরা আর সেখানে যাননি। দেহ দাহ করতে যেতেও আপত্তি জানান। তখন থেকেই ওই বাড়ির উঠোনে খোলা আকাশের নীচে পড়েছিল দেহটি। শনিবার দুপুরে আত্মীয়েরা এলে অবশ্য দু’এক জন গ্রামবাসী দেহ দাহ করতে এগিয়ে আসেন।

Advertisement

ভাই শঙ্কর এবং স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে থাকতেন সঞ্জয়। শঙ্কর বলেন, ‘‘শনিবার রাত থেকেই দাদার দেহ দাহ করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পড়শিদের অনেককে বলেছি। কেউ এগিয়ে আসেননি। জ্বর-শ্বাসকষ্টের জন্য দাদাকে নার্সিংহোম ভর্তি করেছিলাম। দাদার করোনা পরীক্ষা করানো হয়নি। নার্সিংহোমও করেনি। রাস্তায় মারা গেলে যে পুলিশকে জানাতে হয়, জানতাম না।’’ তাপস দলুই নামে গ্রামের এক যুবক বলেন, ‘‘করোনা আতঙ্কেই গ্রামবাসীরা দাহকাজে এগিয়ে যাননি। কাউকে কিছু না-জানিয়ে ওঁরা দেহ বাড়িতে নিয়ে চলে আসেন। মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমরা ধোঁয়াশায়।’’

শনিবার দুপুরে গ্রামের শ্মশানে দেহটি দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয় ধানজমি দিয়ে। এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শঙ্করের দাবি, ‘‘মূল রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে সাঁকো পেরোতে হত। সময় বেশি লাগত। তাই ধানজমি দিয়ে নিয়ে গিয়েছি।’’


অন্যদিকে, এ দিন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কুঞ্জঘাটা রিং রোড এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরনোর খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে স্বপন প্রামাণিক (৬৯) নামে এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে সৎকারের ব্যবস্থা করে। অবিবাহিত ওই বৃদ্ধ বাড়িতে একাই থাকতেন। বেশ কিছু দিন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন না। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বপন কোভিড পরীক্ষা করিয়েছিল। রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ ছিল। কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই তাঁর মৃত্যু হল বলে পুলিশের ধারণা। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বৃদ্ধের কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে পরিষ্কার নয়। কোভিড পরীক্ষা হয়েছিল কিনা জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন