সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও ১২ জন বেড়েছে। বুধবার আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল ৭১। রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ জন। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। ফলে রাজ্যে এখন ৮০ জন সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। এ দিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ছোট ব্যবসায়ীদেরও জিনিসপত্র হোম ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘রাজ্যে এই মুহূর্তে ৮০ জন করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৫।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত মূলত ১১টি পরিবার।’’ বৈঠক চলাকালীন রাজ্যের একটি মানচিত্রে চিহ্নিত করা বিভিন্ন জায়গা দেখান মমতা। বলেন, ‘‘বাংলায় এই সাত থেকে আটটি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’
বণিকসভা-সহ একাধিক ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নবান্নের ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেকের মতামত ও বক্তব্য শোনেন। সব ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সেই সংক্রান্ত কাজের প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন হোটেলে যে কোয়রান্টিন সেন্টার হয়েছে, সেখানে কর্মরতদের রাজ্য সরকারি বিমার আওতায় আনার পাশাপাশি মেহতা বিল্ডিং এবং বাগড়ি মার্কেটে জীবাণুমুক্ত করার কাজ— বৈঠকে এ সব প্রস্তাবও এসেছিল। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সেই সংক্রান্ত কাজ শুরু হয়ে যায় বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
লকডাউনের জেরে মার খাচ্ছে নানা ব্যবসা। তা নিয়েই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে নবান্নে উপস্থিত ছিলেন রাইস মিল, মাছ, পর্যটন, ওষুধ-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। লকডাউনের সময় খাবার, ওষুধ-সহ নানা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের হোম ডেলিভারিতে আগেই ছাড়পত্র দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার ছোট ব্যবসায়ীদেরও জিনিসপত্র হোম ডেলিভারি করার জন্য ছাড় দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউন মানে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। কিন্তু রোগ বাড়ছে, তাই অখুশি হলেও এই পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। তবে এর মধ্যে নতুন সুযোগও রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: হাওড়া হাসপাতালের সুপারের করোনা পজিটিভ, কয়েক জন শীর্ষকর্তাও গৃহ পর্যবেক্ষণে
সেই ‘সুযোগ’ -এর কথা বলতে গিয়েই মমতা বলেন, ‘‘হোম ডেলিভারিতে আগেই আমরা ছাড় দিয়েছি। কারণ, তার সঙ্গে অনেকের রুজি রোজগার জড়িয়ে আছে। তবে এ সময় লকডাউন না ভেঙেও পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। দোকানে যার যা আছে তা হোম ডেলিভারি করা যাবে।’’ ঘরে বসে ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন অনেকে। অনেকের প্রয়োজনীয় কাজও রয়েছে। তাঁদের কথা ভেবে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে কয়েকটি করে ট্যাক্সির বন্দোবস্ত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘২-৩ দিনের মধ্যে পরিবহণ দফতরকে বলব, কিছু কিছু জায়গায় স্ট্যান্ডে ট্যাক্সির ব্যবস্থা করতে। যাঁর প্রয়োজন তিনি সেখান থেকে গাড়ি নেবেন। তবে এ ক্ষেত্রে চালক ও তিন জনের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন: দেশের ২৮৪ জেলায় ছড়িয়ে হটস্পট, পরিস্থিতি মোকাবিলাই চ্যালেঞ্জ
রাজ্যের কয়েকটি হোটেলে কোয়রান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছে। সেখানকার কর্মীদের রাজ্য সরকারের দেওয়া বিমার আওতায় আনার দাবি তোলেন বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাতে সম্মত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া রাজ্যের ওষুধের বাজার মেহতা বিল্ডিং ও বাগড়ি মার্কেট জীবাণুমুক্ত করার দাবিও ওঠে। সেই কাজ বৈঠক শেষের আগেই শুরু হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।