ফাইল চিত্র।
রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩০ জন। মারা গিয়েছেন ন’জন। এই নিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যে সরাসরি করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৮৮। করোনা থাকলেও ‘কো-মর্বিডিটি’ বা অন্য রোগভোগে মৃতের সংখ্যা একই থেকে গিয়েছে— ৭২। এই তথ্য দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা ছিল ৩৩৪। ১৩টি কমে এ দিন সেটা হয়েছে ৩২১। পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি নতুন এলাকা যুক্ত হয়ে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়।
কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জ়োন কমলেও সংক্রমিতের হার ঊর্ধ্বমুখী। এ দিন নতুন করে আক্রান্ত ১৩০ জনের মধ্যে ৬৩ জনই মহানগরীর বাসিন্দা। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ন’জনের মধ্যে আট জন কলকাতার, এক জন হাওড়ার। নতুন করে হাওড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় ১২, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চার, হুগলিতে পাঁচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ছয়, পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁচ এবং পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান ও নদিয়ায় এক জন করে বাসিন্দার নাম রয়েছে নতুন আক্রান্তের তালিকায়।
কলকাতায় আক্রান্তদের মধ্যে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউয়ের এক জন নার্স রয়েছেন। তাঁর বাড়ি শোভাবাজার এলাকায়। ওই নার্সের সংস্পর্শে আসায় তিন জন চিকিৎসক এবং সাত জন নার্সকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। ওই ১০ জনের মধ্যে পাঁচ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। নির্দেশিকা মেনে বাকি পাঁচ জনেরও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। বেহালার এক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মহেশতলার বাসিন্দা এক প্রৌঢ়ার করোনা ধরা পড়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের দু’জন চিকিৎসক এবং আট জন নার্সকে নিভৃতবাসে পাঠাতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। আপাতত ওই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
করোনা-তথ্য
• মোট আক্রান্ত ১৬৭৮
• মোট মুক্ত ৩২৩
• অ্যাক্টিভ আক্রান্ত ১১৯৫
• ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৩০
• ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৯
• মোট মৃত্যু ৮৮
• কো-মর্বিডিটিতে মৃত্যু ৭২
• মোট পরীক্ষা ৩৫,৭৬৭
• ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা ৩০১৫
• সরকারি নিভৃতবাস ৪৯৬৪
• গৃহ-নিভৃতবাস ৯৫৭৬
তথ্য-সূত্র: রাজ্য সরকার
কলকাতায় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সমৃদ্ধি ভবনে এক অফিসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ভবনের একাংশ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। করোনা হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির এক যুবকেরও। শুক্রবার বিকেলে তাঁকে কাঁকসার মলানদিঘিতে কোভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সরাসরি সংস্পর্শে থাকায় আক্রান্তের বাবা, মা, দিদি, কাকা-কাকিমাকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ এপ্রিল কলকাতার মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে লিভারে অস্ত্রোপচার হয় ওই যুবকের। প্রথম করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মঙ্গলবার ফের পরীক্ষা করিয়ে বুধবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সেই রিপোর্টে জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ: কেন্দ্র
আরও পড়ুন: কলকাতার অবস্থা উদ্বেগজনক, বহু এলাকা নিয়েই চিন্তায় পুরসভা
কন্টেনমেন্ট এলাকা
• উত্তর ২৪ পরগনা ৯২
• হাওড়া ৭৬
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা ২২
• হুগলি ১৮
• পূর্ব মেদিনীপুর ৭
• পূর্ব বর্ধমান ২
• নদিয়া ১
• মালদহ ৩
• জলপাইগুড়ি ৪
• দার্জিলিং ২
• কালিম্পং ২
তথ্য- সূত্র: রাজ্য সরকার
বৌবাজার থানার করোনা-আক্রান্ত অফিসারের সঙ্গী, অন্য এক অফিসার ওই ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। এ দিন লালারস পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, তাঁরও করোনা হয়েছে। তাঁকে ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কয়েক দিন আগেই ওই থানার শীর্ষস্থানীয় এক অফিসারের করোনা ধরা পড়ে। তিনিও আছেন ওই হাসপাতালে।
এ দিন রাজ্য সরকারের তরফে কেউ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। তবে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, রোজই রাজ্যে করোনা-পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে। এ-পর্যন্ত ৩৫,৭৬৭টি পরীক্ষা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৩০১৫ জনের। প্রশাসনিক কর্তারা জানান, পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ায় এবং কিট থাকায় পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে। কেন্দ্র আরও বেশ কয়েকটি পরীক্ষাগারের অনুমোদন দিলে রাজ্যে করোনা-পরীক্ষা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও একে এখনই গোষ্ঠী-সংক্রমণ বলতে রাজি নন রাজ্যের বিশেষজ্ঞেরা। রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করলে তবেই গোষ্ঠী-সংক্রমণের তত্ত্ব মানা সম্ভব হবে। কিন্তু কেন্দ্র এই বিষয়ে এখনও কিছু উল্লেখ করেনি।’’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগব্যাধির আবহে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে চলাচল শুরু করতে চাইছে না রাজ্য সরকার। এই নিয়ে অসুবিধার কথা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)