মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের ‘কেনা গোলাম’ নয়! লকডাউন চলাকালীন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে পরের পর ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা বৈঠকে এই ভাবেই সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরিই বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সব রকম সহযোগিতায় তৈরি। কিন্তু রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কেন্দ্র ‘ডজন ডজন’ নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে, কেন্দ্রীয় দল পাঠাচ্ছে। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা নানা রকম চিঠি পাঠাচ্ছেন এবং সে সব চিঠি প্রকাশ্যে এনে ফেলে বাংলার উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজ্য সহযোগিতা করতে চাইলেও কেন্দ্র করোনা মোকাবিলার নামে ‘রাজনীতি’ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ বার ভিডিয়ো কনফারেন্স হয়ে গেল! অথচ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রাজ্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে ‘এক পয়সা’ও পায়নি!
তবে কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, রাজস্ব ঘাটতি অনুদান হিসেবে প্রথম দফায় যে টাকা কেন্দ্র দিয়েছিল, তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছিল রাজ্য। রাজস্ব ঘাটতি অনুদানের দ্বিতীয় দফায় এ দিনই রাজ্যগুলোর জন্য টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। তাতে বাংলার প্রাপ্য হচ্ছে ৪১৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।
রাজধানীর রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ছিল এক দিস্তে কাগজ। তিনি বলেছেন, প্রতি আধঘন্টা অন্তর চিঠি আসছে আর প্রতি দু’দিন অন্তর কেন্দ্রীয় দল আসছে! সূত্রের বক্তব্য, রীতিমতো উষ্মার স্বরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারি বাবু’দের পিছনে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও রাজ্য প্রশাসনের অনেক কাজ রয়েছে। করোনা মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসন লড়ছে। মমতা বলেন, বাংলা যথেষ্ট বড় রাজ্য। এখানে অনেকেই আসেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলা যথেষ্ট কঠিন। আর বাংলা অন্য কোনও রাজ্যের দিকে আঙুল তুলতে চায় না, কারণ এখন সেটা করার সময় নয়। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্তার বক্তব্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব আবার তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, তাঁরা ছোট রাজ্য হতে পারেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ!
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, মমতা এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, রাজ্যের ঘাড়ে শুধু দোষ না চাপিয়ে কেন্দ্রের উচিত স্বচ্ছ রূপরেখা তৈরি করে সহযোগিতা করা। কেন্দ্র বিভিন্ন পরিষেবা চালু করার কথা বলছে। আবার একই সঙ্গে লকডাউন বিধি কঠোর ভাবে কার্যকর করার নির্দেশও দিচ্ছে। এক সঙ্গে দু’টোই কী ভাবে সম্ভব! এই পরিস্থিতিতে লকডাউন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপরে ছাড়ার ব্যাপারে সওয়াল করা হয়েছে।
এর পরেই এ দিনের বৈঠকের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী জানান, লকডাউন তোলার বিষয়ে ১৫ মে-র মধ্যে রাজ্যগুলিকে রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্রের কাছে। তৃতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ ফুরনোর কথা ১৭ তারিখ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন: ১৮ মে থেকে আরও কিছু ছাড়, আর এক দফা লকডাউনের ইঙ্গিত মোদীর
সূত্রের খবর, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বৈঠকে বলেছেন, রাজ্য গোড়াতেই বলেছিল যে যেখানে আছে, সে সেখানেই থাক। পরে পরিস্থিতি বুঝে তাঁদের দফায় দফায় ফেরানো যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এক লপ্তে কত লোককে ফেরাতে রাজ্য প্রস্তুত, তা না জেনেই কেন্দ্র ‘এক-দুই ঘণ্টার নোটিসে’ চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছে, ট্রেন পাঠাচ্ছে। যাঁরা ফিরবেন, তাঁদের ‘রিসিভ’ করা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে রাজ্যকে। অথচ রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাই করা হচ্ছে না! এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি হতে পারে— প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
পরিযায়ীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন, বাইরে আটকে থাকা মানুষের জন্য রাজ্য সরকার অনলাইন ‘এন্ট্রি’ এবং ‘এগ্জিট’ পাস চালু করেছে। বাইরের রাজ্য থেকে বহু মানুষ বাসে করে আসছেন। রাজ্যের মধ্যে দিয়ে অন্য রাজ্যে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের জন্যও বাসের ব্যবস্থা করেছে পশ্চিমবঙ্গ। এক লক্ষের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে রাজ্যে ঢুকে গিয়েছেন। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে রাজ্যকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও যথাযথ তথ্য চাইছে রাজ্য। তা না পেলে ব্যবস্থা করতে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির দিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, ওই চিঠি আসার আগেই রাজ্য ৯টি ট্রেনের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ভুল তথ্য দিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়িয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে এবং বাংলার মানুষকে ‘অপমান’ করা হচ্ছে। রাজ্য মনে করে, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ভাড়া চাওয়া উচিত নয়। কেন্দ্র ওই টাকা খরচ করতে না পারলে রাজ্যই তা করবে। মুখ্যমন্ত্রী চান, ১০০% পরীক্ষা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করুক কেন্দ্রীয় সরকার।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)