কে বাঁচাবে বৃদ্ধাশ্রমে, আঁতুড়েই ধুঁকছে নীতি

কারণ, বৃদ্ধাশ্রমে কোনও নিয়ম আরোপের আইনি ক্ষমতাই নেই সমাজকল্যাণ দফতরের। ‘‘যে-সব বৃদ্ধাশ্রম আমাদের আর্থিক সাহায্য পায়, আমরা শুধু তাদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বাকিদের ক্ষেত্রে নয়,’’ বললেন ওই দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

আইনের বয়স দশ বছর। মা-বাবা ও প্রবীণ নাগরিকদের যত্নআত্তি ও কল্যাণ আইন। সেই অনুযায়ী প্রবীণদের সুরক্ষা, সম্মান রক্ষা এবং জীবনধারণের ন্যূনতম বন্দোবস্ত যাতে নিশ্চিত হয়, তার দেখভাল করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সবে গঠন করেছে রাজ্য স্তরের কাউন্সিল বা পরিষদ। মাথায় খোদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। তার পরেও বৃদ্ধাশ্রমে জুলুম, নিপীড়ন থেকে বয়স্কদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে তারা কার্যত অসহায় বলে স্বীকার করছে সমাজকল্যাণ দফতর। কেন?

Advertisement

কারণ, বৃদ্ধাশ্রমে কোনও নিয়ম আরোপের আইনি ক্ষমতাই নেই সমাজকল্যাণ দফতরের। ‘‘যে-সব বৃদ্ধাশ্রম আমাদের আর্থিক সাহায্য পায়, আমরা শুধু তাদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বাকিদের ক্ষেত্রে নয়,’’ বললেন ওই দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। নতুন বৃদ্ধাশ্রম গড়তেও ওই দফতরের অনুমতির প্রয়োজন নেই।

রাজ্যে সরকারি বৃদ্ধাবাস মাত্র একটি। অনুদান পায় গোটা তিরিশ। এর বাইরে সব বৃদ্ধাবাস দফতরের হাতের বাইরে। এক আইএএস অফিসার নিউ টাউনে বৃদ্ধাবাস গড়তে চেয়ে সম্প্রতি সমাজকল্যাণ দফতরে বৈঠকে বসেন। তখন জানতে পারেন, দফতরের অনুমোদন লাগবে না!

Advertisement

২০০৭-এর ‘মেনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী সম্প্রতি ‘স্টেট লেভেল কাউন্সিল ফর ওল্ডার পারসনস’ গঠন করেছে সমাজকল্যাণ দফতর। ‘‘এই পরিষদ বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ম আরোপ করতে পারবে না। তার জন্য চাই নতুন আইন,’’ বলেন দফতরের এক কর্তা।

বৃদ্ধাবাসে জুলুমের অভিযোগে ৬ মার্চ ‘প্রবীণ নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চ’-এর তরফে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা করেন বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাতে সমাজকল্যাণ দফতর হলফনামায় বলেছে, প্রবীণ কল্যাণে সরকার আলাদা নীতি নিচ্ছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরে সেটি চূড়ান্ত হলে সব বৃদ্ধাবাসে নিয়ন্ত্রণ চালানো যাবে। প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি বৃদ্ধাবাস গড়ে পরিষেবা দেওয়া হবে নিখরচায়। কিন্তু দফতরের খবর, এর কোনওটাই বাস্তবে সম্ভব নয়।

‘‘ওই নীতি এখন হচ্ছে না। কিছু কারণে আটকে গিয়েছে,’’ বলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তা হলে হাইকোর্টে সে-কথা জানানো হল না কেন? দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘খাতায়-কলমে নীতি তৈরি না-হলেও যে-সব কাজ করা সম্ভব, আমরা তা করছি।’’

যিনি মামলা করেছেন, সেই বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, ‘‘ঠিকঠাক তথ্য না-দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের যা বলার, আদালতেই বলবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন