আদালত-পথে: শ্যামল বৈদ্য এবং সাবিত্রী বৈদ্য। নিজস্ব চিত্র
বছর সাতেক আগে ভাঙাচোরা জিনিস কেনাবেচা করত শ্যামল বৈদ্য।
বিভিন্ন নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করত শ্যামলের স্ত্রী সাবিত্রী।
কোনও রকমে দিন গুজরান করতে করতে কী ভাবে ওই দম্পতি শিশু পাচার চক্রে জড়াল, তার তদন্তে নেমে চমকে গিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, গত ৬-৭ বছরে এ রাজ্য এবং ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো ভিন্ রাজ্যে সব মিলিয়ে অন্তত ১৫টি শিশু পাচার করেছে তারা। ‘সুন্দর’ শিশুর ক্ষেত্রে দাম পেয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি। নার্সিংহোমে কাজের সূত্রেই শিশু পাচারে হাতেখড়ি হয় সাবিত্রীর।
শনিবার সকালে শিশু পাচারে জড়িত অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার ‘জীবনদীপ’ নার্সিংহোমের মালিক হরিসাধন খাঁ এবং ও তার ছেলে প্রবীরকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের জেরা করে এই চক্রে জড়িত অভিযোগে ওই সন্ধ্যায় ফলতার দোস্তপুর মোড়ের একটি গোপন ডেরা থেকে শ্যামল-সাবিত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়। ধৃত দম্পতিকে রবিবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক শ্যামলকে ১১ দিনের পুলিশ হেফাজত এবং সাবিত্রীকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ধৃতদের জেরা করে শিশু পাচারের জাল এ রাজ্যে কতদূর ছড়ানো, তার একটা দিশা মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃত প্রবীর ও শ্যামলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলে আরও কিছু তথ্য সামনে আসবে। সেই চেষ্টা চলছে।’’
তদন্তকারীরা জানান, ধৃত দম্পতি আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর আগে তারা এ দেশের বনগাঁয় এসে আস্তানা গাড়ে। শিশু পাচার চক্রে জড়ানোর পরে ধীরে ধীরে তারা বনগাঁ, কলকাতার বেহালা এবং ফলতার ফতেপুর বাস মোড়ে তিনটি বাড়ি করে। এ ছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি বাড়ি রয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে এক জনের মহেশতলায় বিয়ে হয়েছে। অন্যজন কলেজ ছাত্রী। দম্পতি কোনও বাড়িতে বেশিদিন থাকত না। মাঝেমধ্যে গভীর রাতে গাড়িতে ফলতার বাড়িতে আসত। পড়শিদের সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা করত না।
জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ২০১১ সালের পর থেকেই তারা শিশু পাচারে যুক্ত হয়। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি নার্সিংহোম এবং হোমের যোগাযোগ ছিল। তারা সেখান থেকে শিশু সংগ্রহ করত। তার পর সেই শিশুগুলিকে রাখত তাদের চেনাজানা নার্সিংহোমে। সেখান থেকেই দরাদরি করে শিশুগ বিক্রি করা হতো।
গত বছরের শেষ দিকে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় শিশু পাচার চক্রের হদিস মেলার কয়েক দিন পরেই ফলতার চাঁদপালা গ্রামের একটি খালপাড়ের পাশের ঝোপ থেকে তিনটি শিশুকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তখন সন্দেহজনক এক মহিলাকে জেরা করে জানা যায়, ওই তিনটি শিশু তাঁর বাড়িতেই ছিল। তাদের আনা হয়েছিল জীবনদীপ নার্সিংহোম থেকে। ধরপাকড় শুরুর পরেই ওই শিশুদের খালপাড়ের পাশের ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়। ‘জীবনদীপ’ ছাড়া আর কোন কোন নার্সিংহোমের সঙ্গে ওই দম্পতির যোগ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।