নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যে তাঁকে চান না, দু’দফায় গণভোট করে সেটা তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন। উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগ চান যাদবপুরের ৯৭ শতাংশ পড়ুয়া।
রীতিমতো কনভেনশন করে অভিজিৎবাবুর নানা কাজের কড়া সমালোচনায় মুখর হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বড় একটি অংশও। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তাঁরাও উপাচার্যের ইস্তফার দাবি তুলেছেন।
তাঁর প্রতিষ্ঠানে পরিস্থিতি যখন এতটা প্রতিকূল, তখনই উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎবাবুর যোগ্যতা ও নৈতিকতা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন উঠে গেল কলকাতা হাইকোর্টেও।
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভ্রাংশুশেখর আচার্য-সহ কয়েক জন। এ দিন শুনানিতে আবেদনকারীদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের প্রশাসনিক দক্ষতার অভাব রয়েছে। তিনি ভাল প্রশাসক নন।
বিকাশবাবু অভিযোগ তোলেন, উপাচার্যের সততা ও নৈতিকতার বোধও সংশয়ের ঊধ্বের্র্ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৬ লক্ষ টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তিনি কিনেছিলেন দরপত্র না-ডেকেই। ওই টাকা একই দিনে সরবরাহকারীকে দেওয়া হয়েছে। এক জন উপাচার্য এই কাজ করতে পারেন না বলে বিকাশবাবুর দাবি। উপাচার্যের সততা নিয়ে সংশয়ের কারণও ব্যাখ্যা করেন কৌঁসুলি। ২০১১ এবং ’১২-য় অভিজিৎবাবুর তিন-তিনটি গবেষণাপত্রে অন্যদের গবেষণাপত্র থেকে নকল করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানান বিকাশবাবু।
অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম না-মানার অভিযোগও উঠেছে। বিকাশবাবু এ দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনও উত্তরপত্রের এক বার পুনর্মূল্যায়ন হলে সেই ফলই চূড়ান্ত। কিন্তু অভিজিৎবাবু একাধিক ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের আর্জি মেনে পুনর্মূল্যায়ন করা উত্তরপত্র ফের অন্য পরীক্ষককে দিয়েছেন।
তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জয়দীপ কর তাঁর সওয়ালে জানান, এই মামলা আদালতের গ্রহণযোগ্যই হতে পারে না। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারপতি দত্ত রাজ্য সরকার, উপাচার্য ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের বক্তব্য হলফনামা পেশ করে জানাতে হবে। তার ভিত্তিতে আবেদনকারীরা পাল্টা হলফনামা জমা দিতে পারবেন ২৪ ডিসেম্বর।
কিছু দিন আগে গণ কনভেনশন করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (জুটা)। তাতে তাদের বক্তব্য, অভিজিৎবাবু উপাচার্য-পদের যোগ্য নন। জুটা-র মতে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে যে-ধরনের যোগসূত্র থাকলে বা যতটা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকলে এক জন শিক্ষককে উপাচার্য করা যায়, অভিজিৎবাবুর ক্ষেত্রে তার অভাব রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই আগের বার উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গড়া সার্চ কমিটির পছন্দের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।
জুটা প্রশ্ন তুলেছে, অন্যের গবেষণাপত্র থেকে নকল করার দায়ে অস্ট্রেলিয়া ও উত্তরাখণ্ডের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদ ছাড়তে হয়েছে। অভিজিৎবাবুকে তা হলে সরানো হবে না কেন?
অভিজিৎবাবু অবশ্য জুটা-র সব অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, “আমাকে কালিমালিপ্ত করতে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।” অন্যের গবেষণাপত্র থেকে নকলের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য ছিল, “নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিয়েই কাজ করা হয়েছে।”