কাঠগড়ায় ছেলে, জ্ঞান হারালেন মার খাওয়া মা

গ্রেফতার করার পরে সেই ছেলেকেই যখন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, তখন বৃদ্ধা মায়ের চোখে জল। শেষে তিনি জ্ঞানও হারিয়ে ফেললেন!

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১০
Share:

আদালত চত্বরে ডলিরানি মণ্ডল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সম্পত্তি লিখে না-দেওয়ায় ক’দিন আগেই তিনি রাস্তায় ছেলের লাথি-ঘুষি খেয়েছেন বলে অভিযোগ। গ্রেফতার করার পরে সেই ছেলেকেই যখন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, তখন বৃদ্ধা মায়ের চোখে জল। শেষে তিনি জ্ঞানও হারিয়ে ফেললেন!

Advertisement

বৃহস্পতিবার বনগাঁ আদালতে বনগাঁর উনাই কালুপুর এলাকার বাসিন্দা, ডলিরানি মণ্ডল নামে ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ছেলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু কাঠগড়ায় ছেলেকে দেখে আর মন মানেনি।’’ যা শুনে অনেকেই বলছেনন, ‘‘হাজার হোক। মায়ের মন তো!’’ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

আদালত বৃদ্ধার ছেলে, অভিযুক্ত সুব্রত মণ্ডলকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধার উপরে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁর পুত্রবধূ মমতাও। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডলিদেবীর স্বামী প্রয়াত সন্তোষবাবু সরকারি চাকরি করতেন। সন্তোষবাবু বেঁচে থাকার সময়েও বাড়ি-জমির জন্য ছেলে-বৌমা বাবা-মায়ের উপরে নির্যাতন করত বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ দম্পতি বনগাঁ শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে সন্তোষবাবু মারা যাওয়ার পর ডলিদেবী নিজের বাড়ি ফেরেন। অভিযোগ, তখন থেকেই ছেলে-বৌমার অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে।

পুলিশকে বৃদ্ধা জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবর ছেলে-বৌমা সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখিয়ে নিতে তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখে। সেখানে ছেলে তাঁর গলা টিপে দেওয়ালে চেপে ধরে। তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কোনও রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসেও রেহাই পাননি। ডলিদেবী বলেন, ‘‘রাস্তাতেও ছেলে আমাকে বেধড়ক লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। পড়শিরা বাঁচান।’’

সে দিনই ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানান ডলিদেবী। তার পরে বনগাঁর কুন্দিপুরে মেয়ে দেবযানীর বাড়িতে চলে যান। সে দিন থেকেই সুব্রতকে খুঁজছিল পুলিশ। বুধবার রাতে বাড়ি থেকেই সুব্রতকে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে বনগাঁ আদালতের কোর্ট লকআপ থেকে যখন এজলাসের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, তখনই জ্ঞান হারান বৃদ্ধা। পুলিশকর্মীরা বৃদ্ধার চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরান।

বৃদ্ধার আইনজীবী জয়দীপ পালিত জানান, ভয়ে বৃদ্ধা নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। হাসপাতালে যাওয়ার আগে ডলিদেবী কোনও রকমে বলেন, ‘‘নিজের বাড়িতে শান্তিতে থাকতে চাই। এ বয়সে শুধু এটুকুই দাবি। আমার সম্পত্তি তো ছেলে-মেয়েই পাবে। আর কাকে দেব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন