মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে আজ, শনিবার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে আরএসএস-এর সমাবেশে শর্তসাপেক্ষে ছাড়পত্র দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
খিদিরপুরের ভূকৈলাস মাঠ বা ব্রিগেডে শনিবার মোহন ভাগবতকে এনে সভা করার জন্য পুলিশের অনুমতি না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সঙ্ঘ। হাইকোর্ট পুলিশকে বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। পুলিশ সঙ্ঘ কর্তাদের জানায়, ওই দিন পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কারণ গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে পুলিশের একাংশ ব্যস্ত থাকবে। পুণ্যার্থীদের অনেকে ব্রিগেড ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে থাকবেনও।
আর ভূকৈলাস মাঠ এই ধরনের সভা করার পক্ষে ছোট বলে
পুলিশ মনে করছে। এই প্রেক্ষিতেই সঙ্ঘকে সমাবেশের দিন বদলাতে বলে পুলিশ।
কিন্তু হাইকোর্ট শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে, দুর্গাপুজোর সময় কলকাতা পুলিশ একের পর এক প্রতিমা উদ্বোধনের অনুমতি দেয়। তা হলে মকর সংক্রান্তিতে তারা ব্রিগেডে সমাবেশের অনুমতি দিতে পারবে
না কেন? তবে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর নির্দেশ— আজ সমাবেশে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা অনুষ্ঠান শুরুর আগে আরএসএস-কে হলফনামা দিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং আদালতকে জানাতে হবে। ওই অনুষ্ঠানে
হাজার চারেক মানুষ অংশ নেবেন বলে সঙ্ঘের তরফে আদালতে জানানো হয়। বিচারপতি জয়মাল্যবাবু নির্দেশ দেন, সঙ্ঘের দেওয়া পরিচয়পত্র বা কোনও নথি দেখাতে না পারলে আমন্ত্রিতদের অনুষ্ঠানে
ঢুকতে দেওয়া যাবে না। পথচলতি লোকজন অনুষ্ঠানে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেবে। সভাস্থলের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হলে সঙ্ঘকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এই সমাবেশ ঘিরে জটিলতা এবং আদালতে লড়াইয়ের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে আসলে আরএসএসেরই সুবিধা হল বলে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশ
মনে করছে। আরএসএস নেতৃত্বও মানছেন, পুলিশ-প্রশাসনের মনোভাবের জেরে তাঁদের সমাবেশ আরও প্রচার পেয়ে গেল! যে কারণে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘আসলে তৃণমূল এবং বিজেপি তথা আরএসএসের মধ্যে ‘সেটিং’ আছে! মানুষ যাতে সেটা বুঝতে না পারে, তার জন্য আরএসএসকে আদালতে গিয়ে সমাবেশের নির্দেশ নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি কৌশল করে তৈরি করা হচ্ছে।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য আরএসএসের সভা-বিতর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
বিচারপতি এ দিন পুলিশ কমিশনারকে দু’সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হয়ে আদালত অবমাননার কারণ দর্শানোর নির্দেশও দিয়েছেন। কারণ, বুধবার আরএসএসের সভা সংক্রান্ত
মামলার শুনানির সময় বিচারপতি বলেছিলেন, ওই কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকেই বিবেচনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঙ্ঘকে জানাতে হবে। কিন্তু অনুমতি যে দেওয়া হবে না, তা বৃহস্পতিবার আরএসএস-কে চিঠি দিয়ে জানান যুগ্ম কমিশনার (সদর)।
আদালতের এ দিনের রায় তাঁদের পক্ষে গিয়েছে বলে জানিয়ে আরএসএস নেতা জিষ্ণু বসু বলেন, ‘‘আদালতের রায় অক্ষরে অক্ষরে মেনে আমরা সমাবেশ করব। আর সরকারকে বলব, গণতান্ত্রিক ভাবে কথা বলার সুযোগ কেড়ে না নিতে।’’ সঙ্ঘ সূত্রের খবর, বাকিদের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলাগুলিতে এবং কলকাতার কিছু জায়গায় ভাগবতের বক্তৃতা শোনানোর ব্যবস্থা করা হবে।