নবাব তবে কার, সিদ্ধান্ত ঝুলে রইল আদালতে

লোহাপুরের বাসিন্দা দুলাল শেখ ও নুরাঙ্গিনি বিবির বছর চারেকের ছেলে নবাব দু’বছর চার মাস আগে নলহাটি স্টেশন থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। দিনমজুর পরিবার অনেক খুঁজেও তাকে পায়নি। নলহাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও হয়। ২০১৭-র ২১ মার্চ সাঁইথিয়ার পুনুর গ্রামে একটি শিশুর হদিস মেলে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১১
Share:

নবাব পাকাপাকি ভাবে চলেই যাচ্ছিল কলকাতায় নতুন বাবা-মায়ের কাছে। অপেক্ষা কোর্টের রায়ের। তখনই জানা গেল, এ নবাব নাকি সেই হারানো নবাব! তার বাবা-মা আছেন। ছেলের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

Advertisement

নবাব তবে কার, সে সিদ্ধান্ত আপাতত আদালতের হাতে।

বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন বীরভূমের জেলা বিচারক পার্থসারথি সেন, তাঁর এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা। দত্তকের আবেদনকারী দম্পতি না কি জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফেরানো হবে শিশুটিকে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২৭ মার্চ জানাবে আদালত। সিউড়ি আদালতের সরকারি ‘প্লিডার’ শ্রীকান্ত রায় বলেন, ‘‘আইনত দত্তক নিতে বাধা নেই ওই দম্পতির। কিন্তু, আইন আগে না মানবিকতা, তা ঠিক করতে পারছেন না কেউ। তবে শিশুটি যেন তার প্রকৃত বাবা-মাকেই ফিরে পায়।’’

Advertisement

লোহাপুরের বাসিন্দা দুলাল শেখ ও নুরাঙ্গিনি বিবির বছর চারেকের ছেলে নবাব দু’বছর চার মাস আগে নলহাটি স্টেশন থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। দিনমজুর পরিবার অনেক খুঁজেও তাকে পায়নি। নলহাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও হয়। ২০১৭-র ২১ মার্চ সাঁইথিয়ার পুনুর গ্রামে একটি শিশুর হদিস মেলে। নাম বলেছিল নবাব। বাবার নাম দুলাল শেখ। ঠিকানা জানাতে পারেনি। পুলিশ, চাইল্ডলাইন, শিশুকল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি) ঘুরে তার ঠাঁই হয় সিউড়িতে স্পেশ্যাল অ্যাডাপ্টেশন সেন্টারে। শিশুটির বাবা–মাকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়। লাভ হয়নি। কলকাতার তিলজলার এক নিঃসন্তান দম্পতি তাকে দত্তক নিতে আবেদন জানান। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর থেকে শিশুটি সাময়িক ভাবে ওই দম্পতির কাছেই থাকছিল। তার নাম রাখা হয় আরাফত আলি।

শ্রীকান্তবাবু জানান, বৃহস্পতিবার শিশুটিকে নিয়ে আদালত চত্বরে ঢুকছিলেন কলকাতার ওই দম্পতি। তখনই তাঁদের মুখোমুখি পড়েন গুলেনুর বিবি। তিনি-ই দাবি

করেন, এ ছেলে দু’বছর আগে হারানো তাঁর পড়শির ছেলে। মাঝবয়সী ওই মহিলার সঙ্গে ছেলেটিও দিব্যি কথা বলছিল। গুলেনুর তাকে বলেন, ‘‘কী রে বাড়ি যাবি না? চল।’’ বিষয়টি নজর এড়ায়নি কারও। শ্রীকান্তবাবু জানান, গুলেনুর দাবি করেন, এ ছেলে নবাব না হয়ে যায় না। যে সুযোগ পেলেই তাঁর বাড়িতে চলে আসত, তাকে এত দ্রুত ভুলে যাবেন কী করে!

সব জেনে চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি বিচারক। পরবর্তী শুনানির দিন দুলাল-নুরাঙ্গিনিকে শিশুটির অভিভাবকত্বের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ নিয়ে এজলাসে হাজির হতে বলেছেন। তিলজলার দম্পতির সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জানা যাচ্ছে, সন্তান পেয়েও কাছছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় আদালত-কক্ষেই কান্নায় ভেঙে পড়েন কলকাতার ওই মহিলা। আরাফত অবশ্য এখনও তাঁদের কাছেই আছে।

দুলাল-নুরাঙ্গিনি কিন্তু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছেন এ নবাব তাঁদেরই নবাব। বলছেন, ‘‘আশা ছেডে় দিয়েছিলাম। ছেলেটা বেঁচে আছে শুনে কী আনন্দ পেয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন