পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি সূর্যকান্ত মিশ্র এবং এবং রবীন দেবের। —নিজস্ব চিত্র।
নিস্তরঙ্গ উপনির্বাচনের প্রচারের শেষ লগ্নে হঠাৎই আমদানি হল উত্তেজনার! তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থীর হয়ে মিছিলে গিয়ে হলদিয়ায় আক্রান্ত হলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে, টানাহ্যাঁচড়ায় ছিঁড়েছে জামাও। হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলও আঘাত পেয়েছেন। সিপিএমের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। শাসক দলের নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তমলুক ও কোচবিহার লোকসভা এবং মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন কাল, শনিবার। প্রচারের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তমলুক শহরে মিছিল সেরে হলদিয়ায় আসেন সূর্যবাবু। সঙ্গে ছিলেন দলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রবীন দেব। হলদিয়ায় এ দিনের মিছিলের জন্য গত ১৩ নভেম্বর পুলিশের অনুমতি নিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। বিকেল তিনটে নাগাদ ভবানীপুর থানার কদমতলা মো়ড়ে মিছিলের জন্য হাজির হয়েছিলেন সূর্যবাবু, রবীনবাবু, তাপসীদেবীরা। কিন্তু পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় তৃণমূলের মিছিল আছে বলে আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে সিপিএম মিছিল করতে পারবে না। হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান সূর্যবাবুরা।
শেষে হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে ঠিক হয়, গতিপথ বদলে এগোবে লাল মিছিল। রানিচক মোড়ে মিছিল যখন শেষের মুখে, তখন উল্টো দিক থেকে আসা তৃণমূলের মিছিল থেকে সিপিএম নেতৃত্বের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। সূর্যবাবুদের দিকে একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক তেড়ে আসে। হলদিয়ার যুব তৃণমূল নেতা আজিজুল রহমান হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ। যদিও আজিজুলের দাবি, ‘‘সিপিএম বিনা অনুমতিতে মিছিল করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আমরাও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করব! আর আমি কিছু করলে তো ক্যামেরায় উঠবে।’’
সূর্যকান্ত মিশ্রকে নিগ্রহের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়।
বামেরা অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই হামলার ঘটনাকে হাতিয়ার করে পথে নেমেছে। দলের রাজ্য সম্পাদকের উপরে হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় ধর্মতলা মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে ডিওয়াইএফআই। সেখানে এসে যোগ দেন সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের তরফে সুজন চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, কলকাতা জেলা সিপিএমের নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, অনাদি সাহুরা। পুলিশ অবরোধ তুলতে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় শ্যামলবাবু, সুজনবাবুদের। হামলার প্রতিবাদে দু’দিন রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। আর স্বয়ং সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘মারধর তৃণমূলের মজ্জাগত! কিন্তু হামলা করে আমাদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। মানুষের দাবি নিয়ে রাস্তাতেই আমরা সরব হব।’’
বস্তুত, বিমানবাবুর অভিযোগ, দু’টি লোকসভার অন্তর্গত ১৪টি এবং মন্তেশ্বর— মোট ১৫টি বিধানসভা এলাকাতেই উপনির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হচ্ছে। এলাকার হোটেলে-লজে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছে। ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার-কর্মীদের তালিকা হাতে নিয়ে শাসক দলের লোকজন তাঁদের বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কমিশনকে জানানো সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাহিনীর রুট মার্চ শুরু হয়নি। বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘হস্তক্ষেপ করতে না পারলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) পদ ছেড়ে দিন!’’
হলদিয়ায় সিপিএমের উপরে হামলার অভিযোগ উড়িয়ে তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘শেষ বেলায় প্রচারের আলো টানতেই সিপিএম মিথ্যে অভিযোগ করছে। কিছু ঘটে থাকলে সেটা সিপিএমের কর্মীদেরই কাজ!’’ যাঁর ইস্তফায় তমলুকে উপনির্বাচন হচ্ছে, সেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোট নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এ সব গুরুত্বহীন বিষয়ে কিছু বলব না!’’ পুলিশের গাফিলতির কথা মানতে চাননি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশই দ্রুত পরিস্থিতি সামলেছে। ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’