সীতারাম ইয়েচুরি।
আক্রান্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে তাঁরা আছেন, এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হামেশাই করে যাচ্ছেন সিপিএম নেতারা। তাতেও ভোটব্যাঙ্কে ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ অব্যাহত। কোণঠাসা সিপিএম এ বার ভরসা রাখতে চাইছে দল নির্বিশেষে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর নীতিতে। তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন এবং মধ্যপ্রদেশের সিমারিয়া ও গ্বালিয়রে সীতারাম ইয়েচুরি, বাংলার পুরুলিয়ায় বিমান বসুরা সেই নীতিতেই চেষ্টা চালাচ্ছেন হারানো জনসংযোগ ফিরে পাওয়ার। তিন রাজ্যেই এমন সব পরিবারের কাছে তাঁরা গিয়েছেন, ঘটনাচক্রে তাঁদের বেশির ভাগই দলিত তথা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। এবং এঁদের কারও সঙ্গেই দলগত ভাবে সিপিএমের সম্পর্ক নেই!
পুরুলিয়ার বলরামপুরে মৃত দুই বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো ও দুলাল কুমারের বাড়িতে গিয়ে দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমানবাবু ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র। রাজ্যে বিরোধী হিসাবে বামেরা যত জমি হারাচ্ছে, ততই দ্রুত উত্থান ঘটছে বিজেপির। সেই সময়ে মৃত বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে সিপিএম নেতৃত্বের হাজির হওয়া রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্টই বেনজির ঘটনা। বিমানবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘ওঁরা অন্য রাজনৈতিক দল করতেই পারেন। কিন্তু সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাইনি। যে ভাবে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। আমরা চাই, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষিত হোক।’’
বস্তুত, গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার ‘বৃহত্তর তাগিদ’কে সামনে রেখেই রাজ্যে রাজ্যে ঝাঁপাতে চাইছেন ইয়েচুরিরা। বিমানবাবু যে দিন পুরুলিয়ায়, সে দিনই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মধ্যপ্রদেশের সিমারিয়া গ্রামে নিহত যুবক বিমল জাতবের বাড়ি গিয়েছেন। গ্বালিয়রে নিহত রমেশ জাতব ও দীপক জাতবের বাড়ি গিয়েও তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইয়েচুরি। সবক’টি ঘটনাতেই অভিযোগের তির বিজেপি-আরএসএসের দিকে। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার কোনও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার আগেই চাঁদা তুলে জাতবদের পরিবারকে যৎসামান্য অর্থসাহায্য দিয়ে এসেছে সিপিএম। তারও কয়েক দিন আগে ইয়েচুরি তামিলনাড়ুর তুতুকুড়ি হাসপাতালে গিয়ে তুতিকোরিনে পুলিশের গুলিতে আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ইয়েচুরির কথায়, ‘‘যেখানে যারা ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতি করছে, আমরা তার বিরুদ্ধে। সর্বশক্তি দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চালিয়ে এই রাজনীতিকে পরাস্ত করতে হবে।’’ তাঁদের এমন উদ্যোগে ভোটের চিঁড়়ে ভিজবে কি না, তার উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে!