ভোট স্বচ্ছ করতে নির্বাচন কমিশনের ভরসা প্রযুক্তি। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে নজরদারিতে নামছে সিপিএম-ও।
কোন বুথে কী গোলমাল হয়েছে, তা এসএমএসে জেলা নেতারা জানতে পারবেন। তক্ষুণি তা চলে যাবে নির্বাচন কমিশনেও। এ জন্য বুথ এলাকার বাছাই করা কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে দল। শেখানো হয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারের খুঁটিনাটি। জানানো হয়েছে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের কথা। এর মাধ্যমেই দলের জেলা দফতরে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হবে। সিপিএমের এক সূত্রে খবর, প্রতিটি বিধানসভা এলাকার বাছাই করা ৪ জন কর্মীকে জেলায় ডেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই চার জন কর্মী আবার নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় গিয়ে প্রত্যেকটি বুথ এলাকার বাছাই করা দু’জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটি দেখভালের জন্য জেলায় ৮ জনের একটি দলও গড়া হয়েছে।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, এর ফলে এক দিকে যেমন তৃণমূলের ভোট লুঠ আটকানো যাবে, তেমনই দলের সমর্থন বাড়বে। দলের কোন কোন কর্মী এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তা সম্পূর্ণ গোপন রাখছে সিপিএম। এমনকী প্রশিক্ষণ শিবিরে আসা কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা পরিবারের লোকেদেরও যেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু না জানান। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বিশদে কিছু না জানালেও মানছেন, ‘‘এখন সব ক্ষেত্রেই তো প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এ আর নতুন কী!’’ জেলা সিপিএমের অন্য এক নেতা জানাচ্ছেন, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, সব জেলাতেই এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এ জন্য রাজ্য স্তরেও একটি দল গড়া হয়েছে। সিপিএম সূত্রে খবর, যেহেতু এসএমএসের মাধ্যমেই কর্মীদের কাছ থেকে বুথ এলাকার খবরাখবর আদানপ্রদান করা হবে, তাই তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের সব মানুষ এখনও মোবাইলে সমান সড়গড় নয়। তাই শিবির করতে হচ্ছে। বাছাই করা কর্মীদের নিয়েই নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এর ফলে, ভোটের সময় প্রত্যন্ত এলাকার কোন বুথের কী পরিস্থিতি তা উঠে আসবে। আমরা জেলায় বসে সব জানতে পারবো। সেই মতো দ্রুত নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে।
বিহার মডেলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এ বার নতুন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশনও। সুবিধা, সমাধান, সুগম নামে তিনটি অ্যাপ-সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘সমাধান’ ভোটারের সমস্যা, রাজনৈতিক দল কিংবা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর মাধ্যম। ‘সুবিধা’ সভা-মিছিলের জন্য আবেদনের মাধ্যম। কমিশনের জবাব মিলবে অনলাইনেই। বিধানসভা নির্বাচনে কোথায় কী ঘটনা ঘটছে তা জানতে শুধু ভোটকর্মীদের ভরসায় বসে থাকতে চায় না কমিশন। সাধারণ মানুষও যাতে ঘটনা জানাতে পারেন তার জন্যই ‘সমাধান’ মোবাইল অ্যাপ এনেছে কমিশন। কোথাও কোনও গোলমাল হলে যে কেউ এই অ্যাপের মাধ্যমে সেই ছবি পাঠিয়ে দিতে পারেন। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেবে কমিশন। যিনি ছবি বা খবর পাঠাবেন, তাঁর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
কমিশনের এই পদক্ষেপের পরেই প্রত্যেক বুথ এলাকার হালহকিকত জানতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে সিপিএম। দলেরই এক সূত্রে, কোন বুথে কী গোলমাল হয়েছে, তা ‘কোড ওয়ার্ড’-এর মাধ্যমেই এসএমএসে জেলায় জানাবেন বুথ এলাকার কর্মীরা। যেমন, বুথ দখল হলে লিখবেন ‘বি সি’। অর্থাত্ ‘বুথ ক্যাপচারড্’। কর্মীদের মোবাইল নম্বর জেলায় নথিভুক্ত থাকছে। ফলে, কোন এলাকায় কি গোলমাল হয়েছে জেলা নেতারা সহজেই তা জানতে পারবেন।
এ ভাবে গোপনে নজরদারি চালিয়ে প্রত্যেক বুথে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানো গেলে জেলায় দলের ফল খারাপ হবে না বলেই মনে করছে সিপিএম। দলের এক জেলা নেতার দাবি, যদি ৪-৫ শতাংশও ভোট বাড়ে খারাপ কি!