TMC defects Congress

উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে ‘চমক’ দিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে শামিল শঙ্কর মালাকার, চিন্তা বাড়বে বিজেপির?

ঘোর তৃণমূল বিরোধী হিসেবে পরিচিত শঙ্করকে তৃণমূলেই টেনে নিয়ে রাজ্যের শাসকদল উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে রীতিমতো ‘চমক’ দিয়েছে। তবে এই ‘চমকে’ কংগ্রেসের চেয়ে বেশি বিজেপির চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ১৬:৩৮
Share:

বুধবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে (বাঁ দিক থেকে) সুব্রত বক্সী, শঙ্কর মালাকার এবং অরূপ বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত।

তৃণমূলে যোগ দিলেন উত্তরবঙ্গের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। গত কয়েক দিন ধরেই শঙ্করের দলবদল সংক্রান্ত জল্পনা শোনা যাচ্ছিল। বুধবার দুপুরে কংগ্রেসের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাঁকে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। তার পরে বেলা সওয়া ৩টে নাগাদ কলকাতায় তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন শঙ্কর।

Advertisement

শঙ্করের দলত্যাগ উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের জন্য যেমন ধাক্কা, তেমনই ২০২৬ সালের ভোটের আগে তৃণমূলের জন্য লাভজনক। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন শঙ্কর। তবে বিধায়ক হওয়ার আগেও শিলিগুড়ি শহর-সহ গোটা মহকুমায় শঙ্করই ছিলেন কংগ্রেসের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখ। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে প্রথমে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির অনুগামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পরে দীপা দাশমুন্সির শিবিরে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতিও হয়েছিলেন এক সময়ে। তবে দলত্যাগের আগে পর্যন্ত শঙ্কর দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদে ছিলেন।

বুধবার তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে শঙ্কর তৃণমূলে যোগ দিলেন। ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ এবং ‘মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেতে’ তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে শঙ্কর জানিয়েছেন। শঙ্করকে যে দলে ধরে রাখা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে বুধবার সকালেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বুধবার দুপুরে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কংগ্রেস জানায়, শঙ্করকে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের সেই বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তৃণমূল ভবনে শঙ্করকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন বক্সী এবং অরূপ।

Advertisement

শঙ্কর নিজে ২০১১ সালের আগে বিধায়ক হতে পারেননি। কিন্তু শিলিগুড়ি তথা দার্জিলিং জেলার রাজনীতিতে তিনি অনেক আগে থেকেই প্রভাবশালী ছিলেন। দার্জিলিং লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দাওয়া নরবুলার জয় তাঁর তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। শিলিগুড়ির পৌর নির্বাচনে কংগ্রেসের সবচেয়ে ভাল ফলও শঙ্করের নেতৃত্বেই হয়েছিল। কংগ্রেস থেকে গঙ্গোত্রী দত্ত শিলিগুড়ির মেয়রও হয়েছিলেন। তার পরের নির্বাচনে শিলিগুড়ি পৌর নিগমে কংগ্রেসের আসন অনেক কমে যায়। কিন্তু সিপিএম বা তৃণমূল, কেউই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শঙ্কর ফের ‘কিং-মেকার’ হয়ে ওঠেন। তৃণমূলের গৌতম দেবকে আটকাতে সে বার সিপিএমকে সমর্থন করেছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। মেয়র হয়েছিলেন সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য।

এ হেন ঘোর তৃণমূল বিরোধী হিসেবে পরিচিত শঙ্করকে তৃণমূলেই টেনে নিয়ে রাজ্যের শাসকদল উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে রীতিমতো ‘চমক’ দিয়েছে। তবে এই ‘চমকে’ কংগ্রেসের চেয়ে বেশি বিজেপির চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। গোটা রাজ্যের মতো উত্তরবঙ্গেও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক এখন তলানিতে। তাই গত ছয়-সাত বছরে শঙ্কর কংগ্রেসে থেকেও দলকে কোনও নির্বাচনে ভাল ফল উপহার দিতে পারছিলেন না। কিন্তু শঙ্করের মতো বর্ষীয়ান নেতার প্রভাব কংগ্রেসের ঝুলিতে যে পরিমাণ ভোট জোগাড় করছিল, তাতে শিলিগুড়ির প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক ক্ষেত্রে ত্রিমুখী হয়ে উঠছিল। যার সুবিধা পাচ্ছিল বিজেপি। শিলিগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়ার মতো বিধানসভা আসনগুলিতে বার বার ধাক্কা খেতে হচ্ছিল তৃণমূলকে। শঙ্কর এ বার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শিলিগুড়ি এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ত্রিমুখী হবে না বলে অনেকে মনে করছেন। শঙ্করের ব্যক্তিগত জনভিত্তি যদি তৃণমূলের দিকে সরে, তা হলে বিজেপির পক্ষে ওই এলাকার ভোটযুদ্ধ আগের চেয়ে কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement