‘পারস্পরিক ভর্তুকি’র ইঙ্গিত মন্ত্রীর

বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারে বেশি মাসুল, রেহাই মধ্যবিত্তের

আম-জনতার বোঝা তিনি বাড়াবেন না— অনড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যে ভাবে বাড়ছে তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ-মাসুল না বাড়িয়ে উপায় নেই! অগত্যা, প্রশ্ন উঠছে কোন রাস্তায় হাঁটবে রাজ্য সরকার?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

আম-জনতার বোঝা তিনি বাড়াবেন না— অনড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যে ভাবে বাড়ছে তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ-মাসুল না বাড়িয়ে উপায় নেই! অগত্যা, প্রশ্ন উঠছে কোন রাস্তায় হাঁটবে রাজ্য সরকার?

Advertisement

ঠিক সদুত্তর নয়, বরং ইঙ্গিত একটা মিলেছে! শনিবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এই নিয়ে ‘পারস্পরিক ভর্তুকি’র দিকে এগোতে পারে সরকার! সোজা কথায়, যার মানে— যে গ্রাহকদের বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি, তাদের মাসুল দিতে হবে বেশি দরে। আর সেই বর্ধিত মাসুল থেকে আদায় করা টাকায় গরিব বা যাঁরা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তাঁদের ভর্তুকি দেবে সরকার!

এ দিন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের একটি সভায় শোভনদেব জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাবদ প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় রাজ্যকে। তাঁর কথায়, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ খুবই বেড়েছে। কয়লার দাম, পণ্য মাসুলের সঙ্গে বেড়েছে সেস-ও। ফলে দাম বাড়বে বিদ্যুতেরও।’’ এই নিয়ে তাঁর উপর যে চাপ বাড়ছে তা খোলাখুলি স্বীকারও করেছেন মন্ত্রী। বলেন, ‘‘বিদ্যুতের মাসুল নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে ৪টি চিঠি দিয়েছে। এক কথায় যার বয়ান— মাসুল বাড়াও। ৩ মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশও করেছে তারা।’’

Advertisement

তবে উপায়? শোভনদেবের জবাব, ‘‘উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে কী হচ্ছে জানি না। তবে এ রাজ্যে গরিবদের জন্য মাসুল বাড়বে না। যাঁরা মাসে তিনশো ইউনিট বা তার কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদের উপর চাপ বাড়বে না। আর যাঁরা বেশি

বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বা ‘বাল্ক কনজিউমার’, মাসুল বাড়লে তা প্রযোজ্য হবে তাদের জন্য।’’

মন্ত্রীর এমন মন্তব্য থেকে ‘পারস্পরিক ভর্তুকি’র ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে বলে একটি সরকারি সূত্রের মত। তবে নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘পারস্পরিক ভর্তুকিতে সরকারের ঘাড়ে আর কোনও বোঝা থাকবে না, এটা ঠিক নয়। বিদ্যুৎ বাবদ যে

টাকা বর্তমানে সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে দিতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও তা দিতে হবে। তবে এই পদ্ধতিতে হয়তো ভর্তুকির নতুন বোঝা থেকে রেহাই পাবে সরকার!’’

পাঁচ বছর আগে প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ মাসুল বা়ড়িয়ে গরিবদের ওপর চাপ বাড়ানো যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে। সেই সময় বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ নেয় তারা। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মাসুল বৃদ্ধির অনুমতি দেন। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই ফের ইউনিট পিছু গড়ে ২৩-৩৩ পয়সা মাসুল বাড়বে। এই নিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ছাড়পত্রও দিয়েছে বলে খবর।

প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, এই পরিস্থিতিতে স্রেফ জল মাপছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী! বড় গ্রাহকদের মাসুল বাড়লে কী প্রতিক্রিয়া হয়, হয়তো সেটা আগাম বুঝে নিতে চাইছেন। তবে এই নীতি কার্যকর করা হলেও ভর্তুকির হাত থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। কারণ, তথ্য বলছে রাজ্যের ৮০ শতাংশ গ্রাহকই মাসে ৩০০ ইউনিট বা তার কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। সরকার এখন প্রতি ইউনিটে ২৫ পয়সা ভর্তুকি দেয়। সেখানে ‘পারস্পরিক ভর্তুকি’ চালু করা হলেও খুব একটা পরিবর্তন হবে না পরিস্থিতির। বরং উল্টো দিক থেকে দেখলে, স্রেফ রাজনৈতিক কারণে মাসুল বৃদ্ধি থেকে মধ্যবিত্তদের বাদ দেওয়া হলে পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে হতে পারে সরকারকেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন