প্রতীকী ছবি।
জেলার বিভিন্ন ডাকঘরে আটকে রয়েছে ৩৫ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত বিমা প্রকল্পের চিঠি। ডাক বিভাগের কর্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক কর্তাদের চাপে পড়েই সে চিঠি তাঁরা প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারছেন না।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পে উপভোক্তারা বিনামূল্যে ভারতবর্ষের যে কোনও জায়গায়, যে কোনও হাসপাতালে প্রয়োজনে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা করাতে পারবেন। এ কথা জানিয়েই সেই প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
এই মুহূর্তে রঘুনাথগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে আটকে রয়েছে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ লেখা তিন হাজার চিঠি। ডাক বিভাগের কর্তা নির্ঝরকান্তি রায় বলেন, “স্পিড পোস্টে আসা সে চিঠি বিলি করতে প্রথম দিকে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু রঘুনাথগঞ্জ ১ বিডিও ফোন করে সে চিঠি বিলি করতে নিষেধ করেন। তাঁকে আমি বলেছি, চিঠি বিলি করা ডাকঘরের কাজ। কিন্তু তিনি কোনও কথাই শুনতে চাননি। তাই বাধ্য হয়ে সে চিঠি বিলি বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রায় তিন হাজার চিঠি ডাকঘরে পড়ে রয়েছে। বিলি করা যাচ্ছে না। আমি সমস্ত ঘটনা বহরমপুরে পোস্টাল সুপারকে জানিয়েছি।”
রঘুনাথগঞ্জ ১ বিডিও সৈয়দ মাসাদুর রহমান রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরে ফোন করে ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর চিঠি বিলি বন্ধ রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু কেন এ ধরনের ‘নির্দেশ’ তিনি দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা দিতে রাজি হননি তিনি।
আজিমগঞ্জেও আটকে রয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার এই চিঠি। ডাক বিভাগের এক কর্তা জানান, কেউ এক জন আমাকে ফোন করে জানান সেই চিঠি বিলি করা যাবে না। আমি তাঁদের দাবি মানতে অস্বীকার করলে তাঁরা নানা ভাবে সে চিঠি বিলি করতে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন ডাকঘরে গিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তারা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন এই ধরনের কত চিঠি এসেছে, কত বিলি করা হয়েছে, কত চিঠি ডাকঘরে পড়ে রয়েছে। সমস্ত ডাকঘরই সে সব তথ্য দিতে অস্বীকার করে বহরমপুরে পোস্টাল সুপারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। তাই ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর পাঁচ হাজার চিঠি পড়ে রয়েছে এলাকার বিভিন্ন ডাকঘরে।
ধুলিয়ানের এক ডাককর্মী তো ডাকঘর থেকে ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর চিঠি নিতেই অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “ওই চিঠি বিলি করতে গিয়ে মার খাব নাকি? গাঁ-গঞ্জে কাজ করতে হয়। প্রধান, উপপ্রধান সবাই নিষেধ করছেন। তাই আ ঝুঁকি নিইনি।”
মুর্শিদাবাদ ডিভিসনের ডাককর্মী সংগঠনের সম্পাদক মানিক দে বলছেন, “এই ঘটনায় ডাক কর্মীরা বিপদে পড়েছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে ডাক কর্তাদের বৈঠকও হয়েছে। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, চিঠি বিলি-বণ্টন করা ডাক কর্মীদের কাজ। চিঠিতে কী রয়েছে তা জানা ডাককর্মীদের কাজ নয়।’’
তিনি জানান, স্পিড পোস্টে আসা সব চিঠির রেকর্ড রয়েছে। প্রাপক স্বাক্ষর করে সেই চিঠি নেবেন। কোনও মতেই তা ডাকঘরে ফেলে রাখা যাবে না বা চিঠির কথা অস্বীকারও করা যাবে না। তাতে সমস্যায় পড়তে হবে পোস্টমাস্টারদের। কিন্তু এ সব কথা কাজে আসেনি। ফলে বিভিন্ন ডাকঘরে হাজার হাজার চিঠি পড়ে থাকায় ডাককর্মীরা পড়েছেন উভয় সঙ্কটে। সমস্ত পরিস্থিতি পোস্টাল সুপারকে জানানো হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ ডিভিসনের পোস্টাল সুপার অরুণ সরকার বলেন, “ওই চিঠি বিলি নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। সে ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে আসা সমস্ত চিঠিই বিলি হয়েছে। কিন্তু এখন ‘আয়ুষ্মান ভারত’ সংক্রান্ত চিঠি বিলির কাজে গতি কমেছে। প্রত্যেক ডাকঘরকে বলা হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত চিঠি প্রাপকের বাড়িতে চিঠি পৌঁছে দিতে হবে।’’