Bratya Basu

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর সুপারিশ রাজ্যপালের, ব্রাত্য বলছেন, হাস্যকর!

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ব্রাত্যকে পদ থেকে সরানোর সুপারিশ করেছেন বলে খবর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৭
Share:

(বাঁ দিকে) শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ করেছেন। গোটা বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ বলে কটাক্ষ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

Advertisement

পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্যপাল শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। গত ৩০ মার্চ মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভা ডাকা হয়েছিল, যার সভাপতিত্ব করেছিলেন ব্রাত্য। ওই সভাতেই নির্বাচনী বিধি ভাঙা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তার জেরেই ব্রাত্যকে পদ থেকে সরানো এবং তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন তিনি।

রাজভবনের সুপারিশ প্রসঙ্গে রাতে ব্রাত্য এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আমি দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে যদি রাজ্যপালকে সরানোর সুপারিশ করতাম, তা হলে সেটা যেমন হাস্যকর হত, এটাও ঠিক তেমনই হাস্যকর। আমি কোনও নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে থাকলে তা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনার অধিকার রয়েছে যে কোনও রাজনৈতিক দলের। কিন্তু রাজ্যপাল এমন একটি অভিযোগ তুলে নিজের সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার করেছেন এবং নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ও প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন। দ্বিতীয়ত, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাজ্যের মন্ত্রীর অপসারণ বা নিয়োগের সুপারিশ করতে পারেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল শুধু নিজের আসল রংই দেখালেন না, নিজের সাংবিধানিক সীমাও লঙ্ঘন করলেন।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে রাজভবনের এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা ছিল, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। রাজভবনের সেই পোস্টকে উদ্ধৃত করে পোস্ট করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইও। কিন্তু বেলা গড়াতে দেখা যায় রাজভবনের দু’টি পোস্ট মুছে গিয়েছে। কিন্তু পিটিআই তাদের পোস্ট রেখে দেয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই পোস্টগুলি কি আছে? সেগুলি মুছে দেওয়া হয়েছে।’’ তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই দেখা যায়, রাজভবন নবান্নের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে ব্রাত্যকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার।


উল্লেখ্য, রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সম্পর্ক দীর্ঘ দিন ধরেই আদায় কাঁচকলায়। সম্প্রতি তাতে নতুন সংযোজন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানোর প্রসঙ্গ। তা নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত আবার প্রকাশ্যে এসেছিল। বুধবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে গৌড়বঙ্গ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের মনে ‘ক্ষোভ পুঞ্জীভুত’ হয়েছে বলে জানানো হয়। রাজভবনের বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘‘রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের বেআইনি আদেশে যে সকল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ স্তব্ধ করে করে রেখেছেন, আচার্য তাঁদের সতর্ক করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত’ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করা হয় ওই বিবৃতিতে।

গত বছরের অগস্টে রজতকিশোর দে-কে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী উপাচার্যের পদে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। রবিবার রাজ্যপালের তরফে একটি চিঠি পাঠিয়ে রজতকিশোরকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যার নিন্দা করেছিলেন ব্রাত্য। সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভা বসেছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভাপতি হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তার পরেই রজতকিশোরকে সরানোর নির্দেশ আসে রাজভবন থেকে। তৃণমূলের দাবি ছিল, ‘ওয়েবকুপা’র কনভেনশনের জেরেই উপাচার্যকে সরানো হচ্ছে। এ নিয়ে রাজ্য-রাজভবন সংঘাত আরও বৃদ্ধি পায়।

সোমবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ব্রাত্য বলেছিলেন, ‘‘এই লোকটার (রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস) পাগলামি এবং বোকামি দেখতে দেখতে রাজ্যবাসী ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। দু’দিন আগে উত্তরবঙ্গে আমাদের রাজ্য অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র কনভেনশন হয়। সেখানে কার্যকরী উপাচার্য উপস্থিতও ছিলেন না। কিন্তু রাজ্যপালের গোসা হয়েছে। সেই কারণেই নির্বাচনী বিধিনিষেধ না মেনে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উড়িয়ে দিয়ে রবিবার মধ্যরাতে ওই উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’’ এর পরেই ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশ্যে আসে। তার এক দিনের মাথায় এল শিক্ষামন্ত্রীকে সরানোর সুপারিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন