Basirhat

গাছগুলোকে কেউ উল্টে দিয়েছে

গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, তার লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে ঘরবাড়ি তেমন ভাঙার চিত্র নেই। আর গ্রামের রাস্তা দিয়েও দিব্যি এগিয়ে চলেছে এসইউভি।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৪:১৩
Share:

সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

কাচকল বাজার থেকে ডান দিকে টাকি রোড। সোজা এগোলে বসিরহাট। ছুটছে একের পর এক গাড়ি। পুলিশের গাড়ি, সংবাদমাধ্যমের গাড়ি, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স। আসছেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

তবে পাকা রাস্তার দু’ধারে প্রায় কোনও গাছই আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নেই। হঠাৎ বেড়াচাঁপার কাছে এসে লম্বা গাড়ির লাইন। এক দিকে বাংলাদেশ সীমান্তগামী লরির সারি। প্রকাণ্ড সব গাছ পড়ে বেশ কিছু লরির কোমর ভেঙে দিয়েছে আমপান। সেই থেকে কোনও মতে দাঁড়িয়ে লরি। কবে গন্তব্যে পৌঁছবে কেউ জানে না। এত ক্ষণ সার দেওয়া সেই লরির লাইন ঠেলেই এগিয়ে যাওয়া চলছিল। আর গেল না। পর পর গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ।

অগত্যা এক নীলবাতি গাড়ির পিছনে কচুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অলিগলি বেয়ে এগোচ্ছি। বাবা লোকনাথের কচুয়া। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, তার লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে ঘরবাড়ি তেমন ভাঙার চিত্র নেই। আর গ্রামের রাস্তা দিয়েও দিব্যি এগিয়ে চলেছে এসইউভি। প্রায় সব বাড়িই পাকা, রাস্তাও কংক্রিট বা পিচের। ফলে ঝড় এবং তার জেরে ভেড়ি এলাকায় জলপ্লাবন মাটির বাড়ি, মোরামের রাস্তার যে ক্ষতি করতে পারত, তা করতে পারেনি। এমন ওলটপালট অবস্থার মধ্যেও এক জায়গায় বেশ কিছু মানুষের জটলা। দেখা গেল, রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার নামিয়ে ইলেকট্রিক বোর্ড টাঙানো হয়েছে। সকলেই ব্যস্ত মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে। গ্রামীণ জীবনের অঙ্গও যে চিনা মোবাইল ফোন।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা হোক বা আমপান, জনঘনত্বেই লুকিয়ে বিপর্যয়!

আরও একটু এগোলে রাস্তার ধারে জড়ো করে রাখা কয়েক বস্তা আম। পাশেই ঘায়েল হওয়া আমগাছ। যা সহজে মেলে, তাতে মানুষের টান বোধ হয় কমই থাকে। কারণ, কচুয়ার কচিকাঁচারা পুলিশের গাড়ি দেখতেই ব্যস্ত, আম কুড়োতে নয়। এ ভাবে এগোনো গেল স্বরূপনগর বাজারে। মিনিট ৪০ গেলেই বসিরহাট।

স্বরূপনগর বাজার টপকে এগোতে গিয়েই দেখা গেল, ধান গাছ যে ভাবে উল্টে থাকত ঝুলনের ভাঙাবেলায়, রাস্তায় সে ভাবে কেউ যেন গাছগুলোকে উল্টে দিয়ে গিয়েছে। ইলেকট্রিক করাত হাতে গাছ-কাটার দল। আনসার, পিন্টু, ইউসুফ। তাঁরা গাছ কেটে দিলে তবেই এগোতে পারবে পিছনের
অন্তত ৫০টি গাড়ি। কে যেন চিৎকার করে বলছেন, ‘‘আমরা সিএমের সাউন্ড। তাড়াতাড়ি কাটুন।’’ বোঝা গেল, সিএম যদি কিছু বলেন, তার ব্যবস্থা করতে ‘সাউন্ড সিস্টেম’ নিয়ে এসেছে ওই দলটি। সিএমের সাউন্ডের আগে অবশ্য রাজ্য পুলিশের এক আইজি। তিনিই তদারকিতে
নামলেন। এল পুলিশ। হাজির এনডিআরএফ। গাছ কাটার পরামর্শ দিতে গিয়ে আইজি-র সঙ্গে এনডিআরএফের মতবিরোধও হল। তবে আনসার, ইউসুফ, পিন্টুদের করাত সমানে চলছে। এনডিআরএফও হার মেনে যাচ্ছে গাছ কাটুয়াদের কাছে। আনসারের কথায়, ‘‘রোজ ২০০০ টাকা চুক্তিতে এসেছি। বুঝে দেখুন, কারা ভাল কাটছে। ’’

এনডিআরএফের এক কর্তা আনন্দকুমার তখন লিচু কিনে এনেছেন। এক জওয়ান আবার লিচু ছাড়ানোর আগে হাতশুদ্ধি মাখছেন। আর এক জওয়ান লিচু ছাড়িয়ে মুখে তোলার আগে প্রশ্ন করছেন, ‘‘লিচু সে করোনা আতি হ্যায় কেয়া?’’

ধীরে ধীরে গাছও সরল রাস্তা থেকে। সোজা এ বার বসিরহাট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন