Cyclone Amphan

পেয়ারা গাছের ডাল আঁকড়ে সাত ঘণ্টা

রাত ৯টা থেকে রাত ৪টে পর্যন্ত কেটে গিয়েছে এ ভাবেই। একটা সময়ে বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন অঞ্জলি বৈদ্য।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

রূপমারি (হিঙ্গলগঞ্জ) শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৩:৫১
Share:

সব হারিয়ে কান্না অঞ্জলির। নিজস্ব চিত্র

অন্ধকারের মধ্যে একটা একটা করে ঢেউ তেড়ে আসছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি গিলে খাবে। এক গলা জলে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায়, ভয়ে কাঁপছেন বছর পঞ্চান্নর মহিলা। পেয়ারা গাছের ডাল আঁকড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁচার। মাথা নিচু করে সামলে নিচ্ছেন ঢেউ।

Advertisement

রাত ৯টা থেকে রাত ৪টে পর্যন্ত কেটে গিয়েছে এ ভাবেই। একটা সময়ে বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন অঞ্জলি বৈদ্য। এ রাতের সকাল নেই, ধরে নিয়েছিলেন। শেষমেশ, বাঁচিয়ে দিল সঙ্গী ছোট্ট একটা টর্চ। মাঝে মাঝে সেই টর্চ জ্বেলে সঙ্কেত দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন অঞ্জলি। সেই আলোই চোখে পড়ে পড়শিদের। অঞ্জলিকে উদ্ধার করতে জল ঠেলে এগিয়ে আসেন তাঁরা।

বুধবার রাতের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল বাধ মানছে না অঞ্জলির। বলছেন, ‘‘ঝড়টা একেবারে পথের ভিখারি করে দিয়ে গেল গো! লোকের কাছে চেয়েচিন্তে যে খাব, সেই উপায়ও নেই। থালা-গ্লাসটুকুও কেড়ে নিয়েছে ওই নদী।’’

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনাড়া গ্রামে ডাঁসা নদীর বাঁধের একেবারে ধারে থাকতেন অঞ্জলিরা। থাকতেন বলাই ভাল। কারণ, ঘরবাড়ি-জমি— সবই স্রোতে ভেসে গিয়েছে। দুই ছেলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঠিক করেন, যে ভাবে হোক বাড়িতেই থেকে যাবেন। কিন্তু বুধবার ঝড়ের দাপট বাড়তে থাকায় মাটির দেওয়াল, অ্যাসবেস্টসের এক চিলতে ঘরে আর বেশিক্ষণ থাকার সাহস করেননি। রাত ৯টা নাগাদ একটা টর্চ হাতে দু’জনে বেরিয়ে পড়েন। .

আরও পড়ুন: ভেজা চাল রোদে শুকিয়ে বাঁচার লড়াই

সবে মাত্র দড়ি খুলছেন গরুগুলোর, এরই মধ্যে প্রবল শব্দে ভাঙল বাঁধ। জলের তোড়ে ভেসে গেলেন স্বামী-স্ত্রী। অন্ধকারের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে খানিক দূর গিয়ে পেয়ারা গাছে ঠোক্কর খান অঞ্জলি। গাছের ডালে আটকে যায় ব্লাউজের একটা অংশ। আঁকড়ে ধরেন গাছের ডাল। ওই ভাবেই চলতে থাকে লড়াই।

দুর্যোগ একটা সময়ে কমে আসে। তখনও জানেন না স্বামী নিরঞ্জন কোথায়। সকালের দিকে তাঁকেও কিছু দূরে বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। জলের তোড়ে ভেসে সেখানে আটকে গিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন নিরঞ্জন।

আরও পড়ুন: চাষে ধাক্কা বহু কোটির, দাবি উঠছে ক্ষতিপূরণের

আপাতত বাঁধের উপরে এক টুকরো প্লাস্টিক টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অঞ্জলিদের মতো আরও শ’খানেক মানুষ। কিছু ক্লাব-সংগঠন খাবার-দাবার দিয়েছে। শনিবার জল দিয়েছে বিশপুর পঞ্চায়েত। পড়শিরা কয়েকখানা শাড়ি-ব্লাউজও দিয়েছেন। তবে সরকারি ত্রাণের খাবার কিছু মেলেনি বলে জানালেন অঞ্জলি।

তবু প্রাণে বেঁচেছেন, এটুকুই স্বস্তি। ‘‘ছোট্ট টর্চটাই মনে হয় বাঁচিয়ে দিল’’— চোখের জল মুছে বলছেন অঞ্জলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন