ফণী-ফোনে রাজনীতি, জেলা সফরে রাজ্যপাল

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ফণী-সফর ঘিরে বিতর্ক শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বেসরকারি ভাবে দাবি করা হল, নরেন্দ্র মোদী কথা বলতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু দু’বারের চেষ্টাতেও ফোন পাওয়া যায়নি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

গোপগড়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ফণী-সফর ঘিরে বিতর্ক শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বেসরকারি ভাবে দাবি করা হল, নরেন্দ্র মোদী কথা বলতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু দু’বারের চেষ্টাতেও ফোন পাওয়া যায়নি।

Advertisement

সেই ফোনের ব্যাপারে অবশ্য বিস্তারিত কিছু সরকারি ভাবে জানায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কেন তা সরকারি ভাবে জানানো হল না, উঠছে সেই প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীর ফোন আদৌ এসেছিল কিনা, নবান্নের তরফেও এ দিন সেই বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেছেন, ‘‘ফোনের জবাব দেননি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বাধ্য হয়েই রাজ্যপালের কাছে থেকে ঝড় সংক্রান্ত খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী।’’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফণী-বিধ্বস্ত ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কথার বিষয়টি অবশ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন মমতার সঙ্গেও কথা হয়েছে নবীনেরও। প্রথমে মমতাই ফোন করেছিলেন। যোগাযোগ হয়নি। পরে নবীন নিজে ফোন করেন। বিধ্বস্ত এলাকার পুনর্গঠনে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দেন মমতা। মমতা আরও জানিয়েছেন, এ রাজ্যে ঝড়ের ধাক্কায় ৬ হাজার কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ এবং ৩০ হাজার বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতি অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।

Advertisement

তাঁর সফর ফিরে রাজনৈতিক বিতর্কের এই আবহেই এ দিনও দুর্গত এলাকায় ঘুরেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কাকদ্বীপের পরে মেদিনীপুরে গিয়েও তিনি শুনেছেন, ‘ত্রিপল, খাবার, পোশাক—সব পেয়েছি। আমরা ভাল আছি।’

মেদিনীপুর ছাড়ার আগে জেলা প্রশাসনকে দরাজ শংসাপত্রও দিয়ে গিয়েছেন রাজ্যপাল। বলেছেন, ‘‘ঘুরে দেখলাম, স্থানীয় প্রশাসন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা সন্তোষজনক। কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। সকলেই জানিয়েছেন, যেখানে যা প্রয়োজন ছিল, সব দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর জেলা সফরের পিছনে রাজনীতি নেই জানিয়ে রাজ্যপালের সংযোজন, ‘‘এটা ভুল ধারণা। রাজ্যপাল হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিস্থিতি দেখতেই এখানে এসেছি।’’ ক্ষয়ক্ষতির খোঁজে বৈশাখী দুপুরে এ দিন চরকিপাক খেয়েছেন রাজ্যপাল। মেদিনীপুরে পৌঁছে প্রথমে সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। কোথায় কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জেনে নেন। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল যান মেদিনীপুর শহরের তালপুকুরে। এখানে ৩০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগের পরে সকলে কেমন আছেন, ত্রাণ ঠিকঠাক পেয়েছেন কি না, জানতে চান রাজ্যপাল। ঝড়ে শেখ ইয়াদ আলির বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। ইয়াদ রাজ্যপালকে বলেন, ‘‘ঝড়ের পরে তৃণমূলের লোকেরা এসেছিল। আমরা সব পেয়েছি। ত্রিপল, খাবার সব।’’ শেখ নওসাদ আলির কথায়, ‘‘ঝড়ের রাতেই আমাদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ত্রিপলও পেয়েছি।’’

মেদিনীপুর গ্রামীণের গোপগড় থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের ধারিন্দা, এ দিন সফর-পথে সব জায়গাতেই রাজ্যপাল শুনেছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা আমাদের পাশেই আছেন।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘রাজ্যপাল হয়তো অন্য কিছু

শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ তো সত্যিটাই বলবেন।’’

ওড়িশা হয়ে আজ, সোমবার হলদিয়া এবং ঝাড়গ্রামে নির্বাচনী সভা করতে আসার কথা প্রধানমন্ত্রীর। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, কলাইকুণ্ডায় নেমে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠক করতে পারেন মোদী। যদিও এ দিন রাত পর্যন্ত রাজ্য এবং জেলা প্রশাসনের সূত্রে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনও বৈঠকের সূচি তাদের জানা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন