দমকা হাওয়ায় ভাঙল বাড়ি, সুনসান সৈকত 

বিপদ এড়াতে বৃহস্পতিবার রাতেই পর্যটকদের দিঘা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন। এ দিন সকালে ঘরে ফেরার ধুম পড়ে যায়। দিঘা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ে, বাসেও ছিল ভিড়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৪:৩৫
Share:

জনহীন: অশনি সঙ্কেতে পর্যটকশূূন্য দিঘার সৈকত। নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার সকাল। ওড়িশা উপকূলে ততক্ষণে আছড়ে পড়ছে ‘ফণী’। বিক্ষিপ্ত ভাবে তার আঁচ পড়ল দুই মেদিনীপুরেও। আর ঝাড়গ্রামে জারি হয়েছে সতর্কতা।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই দিঘায় বইতে শুরু করে ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বৃষ্টি। তবে একটানা বৃষ্টি হয়নি। বাতাসের গতিও কমেছে মাঝেমধ্যে। তবে ওই দমকা হাওয়াতেই ক্ষণিকাঘাটের কাছে উড়ে গিয়েছে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের ছাউনি, রামনগর ও দেশপ্রাণ ব্লক এলাকায় ভেঙেছে কিছু বাড়ি।

বিপদ এড়াতে বৃহস্পতিবার রাতেই পর্যটকদের দিঘা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন। এ দিন সকালে ঘরে ফেরার ধুম পড়ে যায়। দিঘা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ে, বাসেও ছিল ভিড়। বেলা বাড়তেই দিঘার সৈকত সুনসান হয়ে যায়। নুলিয়া আর বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। চাঁদপুর, শঙ্করপুরে গিয়ে উদ্ধারকারী দল গ্রামবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

হলদিয়াতেও সারা দিন ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে, সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। শিল্পশহরে আবার রাস্তার উপরে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার ট্যাঙ্কারগুলি দাঁড়িয়ে থাকায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তেল, গ্যাস বা বিভিন্ন রাসয়নিক ভর্তি ওই সব ট্যাঙ্কার ঝড়-বৃষ্টিতে উল্টে পড়ে বিপত্তি বাধতে পারে বলে আশঙ্কা। মহকুমাশাসক কুহুক ভূষণের অবশ্য দাবি, এখন যে সব ট্যাঙ্কার রয়েছে তাদের অধিকাংশই খালি। বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়িতে আবার ২০ সেকেন্ডের ঝড়ে ৮টি বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়ে, গোটা পঞ্চাশেক গাছ উপড়ে বিপত্তি বেধেছে। নন্দকুমারের চক বহিচবেড়িয়া এলাকায় আবার ৫০টি বাড়ি ও শতাধিক পান বরোজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ফণীর জন্য গোটা জেলায় ৬১টি শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে ২২,১৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন।’’ এ দিন সকালে কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে মেদিনীপুর শহরের একাংশও। অনেক বাড়ির ছাদ ভেঙেছে, ফাটল ধরেছে দেওয়ালে, ধসে পড়েছে কিছু মাটির দেওয়াল।। জেলাতেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে এ দিন শহরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, সহ- সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। অজিত বলেন, ‘‘একটা বিপর্যয় নেমে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী খড়্গপুরে রয়েছেন। দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। উনি নিজেও ভীষণ চিন্তিত।’’ পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ জানান, দুর্গতদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।

ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে গড়বেতা, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোডের কয়েকটি বাড়ির চালও উড়েছে, ভেঙেছে গাছ। খড়্গপুর শহর লাগোয়া খড়্গপুর-২ ব্লকের সাঁকোয়া পঞ্চায়েতের ধারিম্বায় ৩০টি বাড়ির ছাউনি উড়েছে, ধসেছে দেওয়াল। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার জানান, রেল বস্তির বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। পুরসভাও কন্ট্রোলরুম খুলেছে।

ওড়িশা লাগোয়া হলেও নারায়ণগড় ও দাঁতনে ক্ষয়ক্ষতি তুলনায় কম হয়েছে। কয়েকটি বাড়ির চাল উড়ে যাওয়া ছাড়া বড় বিপত্তি ঘটেনি। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুরে প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে হাজার তিনেক মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন