ঝড়ের দাপটে হেলে পড়েছে একটি গাছ। দিঘায়। —নিজস্ব চিত্র।
তাণ্ডবের যে রূপ ওড়িশা দেখেছে, তার ধারেকাছে নেই পশ্চিমবঙ্গ। যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেকটাই কম প্রভাব পড়েছে এ রাজ্যে। দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা অংশ ছাড়া (বকখালি, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার) খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এখনও পর্যন্ত যা তথ্য তাতে ১২টা কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে এবং ৮২৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিকেল ৩টে নাগাদ ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে নিম্নচাপটি। অসমের ধুবড়ি থেকে দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
কিন্তু কী ভাবে এই বিপদ এড়ানো গেল? এটা কি প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতির ফল নাকি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল ফণী?
আসলে, ১০ বছর আগের আয়লার অভিজ্ঞতা থাকায় এমনিতেই প্রশাসনিক তৎপরতা ছিল। মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাইক্লোনিক জোনের বাসিন্দারা সাইক্লোন সেন্টারে শুক্রবার সকাল থেকেই আশ্রয় নেন। ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার একটা কারণ অবশ্যই সেটা। একই সঙ্গে ফণীর শক্তি হারানোও একটা বড় কারণ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, যে শক্তিতে এ রাজ্যে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেই হিসাবে কোনও ভুল ছিল না। সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়েই শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওড়িশা হয়ে এ রাজ্যে ঢুকে পড়ে ফণী। ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে খড়্গপুরের বুকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই ফণী তাণ্ডব চালায়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বকখালিতেও গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ফণীর দূরত্ব থাকায় ঝড়ের গতি ছিল প্রায় ৫০ কিলোমিটার। তার পর কলকাতার পাশ কাটিয়ে ক্রমশ হুগলির আরামবাগ, বর্ধমানের কাটোয়া হয়ে নদিয়ায় প্রবেশ করে। কিন্তু স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত গতিতে শক্তি খোয়াতে শুরু করে ফণী। এত দ্রুত যে ফণী শক্তি হারাবে সেটা আশা করেননি আবহবিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: মোবাইল টাওয়ারগুলো যেন কেউ খেলনার মতো ভেঙে দিয়েছে, ইটের চাঙড় উড়ে এসে পড়ল গাড়িতে
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে সারা রাজ্যে তাণ্ডব চালানোর পর শক্তি খুইয়ে বাংলাদেশে সাইক্লোনিক স্টর্ম বা ঘূর্ণিঝড় হয়ে প্রবেশ করার কথা ফণীর। কিন্তু দ্রুত শক্তি খোয়ানোর ফলে এ রাজ্যেই ফণী শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যায়। দ্রুত আরও শক্তি খোয়াতে শুরু করেছে। ফণীর গতিবিধির উপর নজর রাখা আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শনিবার দুপুরের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এই ঘূর্ণিঝড়। ফলে যে প্রবল আশঙ্কায় প্রহর গুনছিলেন সাধারণ মানুষ, তার অভিঘাত অনেকটাই কম হয়। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশে ঝড় হবে না। তবে ভারী বৃষ্টি হবে। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশ লাগোয়া এ রাজ্যের জেলাগুলোতেও। এর প্রভাব পড়েছে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে। দুই জেলাতে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফণীর দাপটে তছনছ ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর, দেখুন ধ্বংসের সেই ছবি
কেন্দ্রীয় আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতার পাশ দিয়ে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে নদিয়া জেলার দিকে চলে যায় ফণী। খুব দ্রুত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ফলে যে পরিমাণ হাওয়ার গতিবেগ হবে অনুমান করা হয়েছিল, তার থেকে গতিবেগ ১০-২০ কিলোমিটার কম ছিল।’’
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাস বলেন, ‘‘বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভাগের যে অংশে প্রথম আঘাত করে, সেখানেই সব থেকে বেশি গতিবেগ থাকে ঘূর্ণিঝড়ের। তাই ওড়িশাতে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। তার পর যেহেতু স্থলভাগ দিয়ে বেশি সময় ধরে ঘূর্ণিঝড়টি এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে, তাই বাধা পেয়ে গতি এতটা কমে গিয়েছিল।’’ তিনি আরও জানান, ফণী এ রাজ্যে প্রবেশ করার পর, কলকাতা থেকে যেহেতু ৪০ কিলোমিটার দূরে ছিল, তাই শহরে এর প্রভাব অনেকটাই কম ছিল। পাশাপাশি এ রাজ্যে ফণী দ্রুত বাংলাদেশের দিকে চলে যাওয়ার কারণে জেলাগুলিতেও ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয়নি।