বারান্দায় পড়ব, বলছে পড়ুয়ারা

শনিবার তাদের বক্তব্য, ‘‘স্কুলঘর বন্ধ থাক। বারান্দায় পড়াশোনা করব।’’ জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বেরুবাড়ি তফসিলি ফ্রি হাইস্কুলে দৃশ্য। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৩:৩৯
Share:

সরকারি নির্দেশ মেনে স্কুলে আসেননি শিক্ষকরা। কিন্তু পড়ুয়ারা হাজির। শুক্রবারই তারা স্কুল খুলে রাখার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। শনিবার তাদের বক্তব্য, ‘‘স্কুলঘর বন্ধ থাক। বারান্দায় পড়াশোনা করব।’’ জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বেরুবাড়ি তফসিলি ফ্রি হাইস্কুলে দৃশ্য।

Advertisement

কোচবিহারের হলদিবাড়ি ব্লকের আঙুলদেখা কমলাকান্ত হাইস্কুলের পড়ুয়ারা আবার জানতই না, এ দিন থেকে দু’মাসের জন্য ছুটি পড়ে গেল। যথাসময়ে তারা স্কুলে এসে দেখে দরজা বন্ধ। ক্ষোভে ফেটে পড়ে পড়ুয়াদের একাংশ। তাদেরই কারও কারও বক্তব্য, ‘‘এত দিন টানা ছুটি থাকলে সিলেবাস শেষ করব কী ভাবে!’’

প্রায় একই উষ্মা দেখা গেল শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের দরজাতেও। টানা স্কুল বন্ধের কথা জানার পরে শনিবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকদের একাংশ। স্কুলের প্রধান ফটকে তালাও ঝোলান তাঁরা। শেষে সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ পুলিশ গিয়ে সেই তালা খুলে দেয়। পরে অভিভাবকেরা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ফণীর জন্য কয়েক দিন বন্ধ দেওয়া হচ্ছে, সেটা ঠিক আছে। তা দু’তিন দিন হতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে গরমের আগাম ছুটি, আবার সরকারি নিয়মে গরমের ছুটি যোগ করে দেওয়া হল! তা হলে পড়াশোনাটা কখন হবে?’’

Advertisement

ফণীর ধাক্কা এবং অসহ্য গরমের জন্য ৩ মে থেকে দু’দফায় ২০ মে পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা করেছে সরকার। এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে, ২০ মে থেকে সরকারি ভাবে গরমের ছুটি পড়ে যাচ্ছে, যা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। ফলে কার্যত দু’মাস বন্ধ থাকবে সরকারি, সরকার পোষিত স্কুলগুলি। উত্তরবঙ্গের পড়ুয়া থেকে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এর ফলে যে পড়াশোনার ক্ষতি হল, তা পুষিয়ে দেবে কে? মালবাজারের এক অভিভাবক রেতিয়া মাহালি বলেন, “আমরা বিশেষ পড়াশোনা করিনি। তাই বাড়িতে বাচ্চারা কিছু শিখতে পারে না, স্কুলই ভরসা। টানা ছুটি থাকলে ওরা স্কুলের পথ ভুলে যাবে।”

এর সঙ্গে উঠেছে মিড ডে মিল নিয়ে প্রশ্নও। রাজ্যের অন্যান্য এলাকার মতো উত্তরবঙ্গেও এমন অনেক প্রান্তিক পরিবারে ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়তে এসে মিড ডে মিল পায়। সেই সব ছেলেমেয়ের খাবার জুটবে কী ভাবে— এই প্রশ্নও উঠেছে। পাশাপাশি, যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মিড ডে মিল রান্না করে উপার্জন করেন, তাঁদেরই বা চলবে কী করে, এই প্রশ্নও থাকছে।

এই সব কারণেই স্কুলে স্কুলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে দাবি অনেকের। শুক্রবার বেরুবাড়ির একটি স্কুল দিয়ে শুরু হয়েছে। শনিবার হলদিবাড়ি এবং শিলিগুড়িতেও একই ছবি দেখা গেল। শিক্ষক সংগঠনগুলিও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মালদহ জেলার নেতা ভুবন কুমার বলেন, “এ ভাবে দীর্ঘ ছুটি দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই লাটে ওঠাতে চাইছে সরকার।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ সবের ফলে বেসরকারি স্কুলের রমরমা আরও বাড়বে।” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি বিপ্লব গুপ্ত অবশ্য বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রচণ্ড গরমের জেরেই সরকার ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ছুটি ঘোষণা করেছে। এতে হইচই করার কী আছে?”

আর সিলেবাস শেষ করা নিয়ে আলিপুরদুয়ারের ডিআই (প্রাথমিক) শ্যামল রায় সাফ কথা, “এটা সরকারি নির্দেশ। স্কুল খুললে, প্রয়োজনে বাড়তি সময় দিয়ে সিলেবাস শেষ করার দায়িত্ব শিক্ষকদেরও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন