গরম ও ঝড়ে স্কুলে ছুটি টানা দু’মাস! বিতর্ক শিক্ষা শিবিরে

বিতর্কের মূলে আছে দু’টি নির্দেশিকা-বিজ্ঞপ্তি এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০৪:১০
Share:

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

গ্রীষ্মে গরম তো পড়বেই। তার জন্য আছে গরমের ছুটি। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতেই পারে। তার জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ হতেও পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজ্যে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে টানা দু’মাসের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে স্কুলশিক্ষা সচিবের একটি নির্দেশিকায়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে তুমুল বিতর্ক।

Advertisement

বিতর্কের মূলে আছে দু’টি নির্দেশিকা-বিজ্ঞপ্তি এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য।

স্কুলশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন একটি নির্দেশিকায় জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর প্রচণ্ড গরমের জন্য আজ, শুক্রবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি চলবে স্কুলে।

Advertisement

নবান্নের একটি বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে, আজ, শুক্রবার ও কাল, শনিবার উপকূলবর্তী আট জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় সব স্কুল ও মাদ্রাসায় ছুটি থাকবে। এই দু’দিন পড়ুয়া বা শিক্ষক, কাউকেই স্কুলে যেতে হবে না।

আর শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই ছুটি শুধু ছাত্রছাত্রীদের। অতিরিক্ত ছুটির দিনগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথারীতি স্কুলে হাজির হতে হবে।

আইসিএসই, সিবিএসই স্কুলেও ছুটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরম। জেলায় জেলায় যাচ্ছি, দেখছি তো। কোথাও কোথাও দেখছি, জল নেই। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে? তাই ছুটি দিয়ে দেওয়া হল।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঘূর্ণিঝড়ের পরে আবহাওয়া যদি তুলনায় শীতল হয়ে যায়, তখন কী হবে? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘তখন ভেবে দেখা যাবে। বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই এই ছুটি শুধু পড়ুয়াদের। শিক্ষকদের নয়। অতিরিক্ত ছুটির দিনগুলিতে তাঁদের স্কুলে আসতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন আসবেন না? অন্যেরা অফিসে কাজ করছেন না?’’

নিয়ম অনুযায়ী ১৭ মে থেকে ৫ জুন গরমের ছুটি থাকে। এ বার তার সঙ্গে এত দিন অতিরিক্ত ছুটি দেওয়ায় শিক্ষক শিবির বিস্মিত। স্কুলগুলিতে অগস্টে দ্বিতীয় টার্মের পরীক্ষা আছে। টানা দু’মাস ছুটি থাকলে কী করে পাঠ্যক্রম শেষ হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। অতিরিক্ত ছুটিতে পড়ুয়াহীন স্কুলে শিক্ষকেরা কী করবেন, প্রশ্ন সেটাও।

এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘এ ভাবে ছুটি দিয়ে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিতে চাইছে সরকার। পড়ুয়ারাই যখন আসবে না, শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়ে কী করবেন?’’ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদাম জানা বলেন, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষক মহলকে অবাক করেছে।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের অভিযোগ, এ-রকম ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত রাজ্যের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের প্রশ্ন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যদি ক্লাস বন্ধ থাকে, শিক্ষকদের আসতে হবে কেন? ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের জন্য দু’দিন বিদ্যালয় বন্ধ রেখে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা উচিত ছিল। আমরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি,’’ বলেন স্বপনবাবু।

আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন জানান, টানা ছুটি দেওয়া হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইসিএসই পূর্বাঞ্চলীয় স্কুল সংগঠনের সভাপতি তথা রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের জন্য শুক্রবার ছুটি দিয়েছি। এর পরে ভেবে দেখব।’’

সিবিএসই পরিচালিত বেশ কিছু স্কুল শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেছে। সিবিএসই বোর্ড পরিচালিত সাউথ পয়েন্টের পক্ষে কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘ফণীর জন্য আমরা শুক্র ও শনিবার ছুটি দিচ্ছি। পরের সপ্তাহে ক্লাস হবে। তার পরে নির্ধারিত গরমের ছুটি যেমন থাকে, সে-রকমই থাকবে।’’ শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যেটুকু জানতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার বিকেলের আগে শহরে আসছে না। তাই আমরা শুক্রবার অর্ধদিবস ছুটি দিচ্ছি। তার পরে গরমের ছুটি যেমন হয়, তেমনই হবে।’’ সিবিএসই পরিচালিত এপিজে স্কুলও ফণীর জন্য শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেছে। ডিপিএস নিউ টাউনের অধ্যাক্ষা সোনালি সেন জানান, স্কুল খোলা আছে। তবে অভিভাবকেরা বিবেচনা করে দেখবেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন কি না। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ডিপিএস মেগাসিটি ও ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুলেও ছুটি থাকছে না।

কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলে ৩ এবং ৪ মে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতার মাদ্রাসা বোর্ড পরিচালিত স্কুলে শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন