পরীক্ষার বলে দ্বার খুলল

ফের তালা দাড়িভিট স্কুলে

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই ধারণা, কোচবিহারে রথযাত্রা বন্ধ হয়ে যেতেই ফের দাড়িভিট প্রসঙ্গকে সামনে তুলে আনতে চাইছে বিজেপি।  রথযাত্রা হলে তা দাড়িভিটেও আসত। রথযাত্রার সময় জেলাতে বড় সভারও আয়োজন করার কথা ভেবেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

প্রতিবাদ: দাড়িভিট স্কুলের বাইরে রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

দাড়িভিট স্কুল নিয়ে আচমকা আবার উত্তেজনা তৈরি হল শুক্রবার। এ দিন ফের দাড়িভিট স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় নিহত দুই যুবকের পরিবারের সদস্যরা। এ দিন পরীক্ষা ছিল। তার মধ্যে হঠাৎ এই কাণ্ডে অবাক প্রশাসনও। তবে দু’ঘণ্টা পরে তালা খুলে দেওয়া হয়। পরীক্ষা হয়েছে। স্কুলের অন্য কাজও করতে দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকেরা স্কুল বন্ধ করে চলে যেতেই নিহতদের পরিবার ফের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাই শনিবার স্কুল খোলা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই ধারণা, কোচবিহারে রথযাত্রা বন্ধ হয়ে যেতেই ফের দাড়িভিট প্রসঙ্গকে সামনে তুলে আনতে চাইছে বিজেপি। রথযাত্রা হলে তা দাড়িভিটেও আসত। রথযাত্রার সময় জেলাতে বড় সভারও আয়োজন করার কথা ভেবেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাতে কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদেরও আনার কথা ছিল। কিন্তু রথের যাত্রা ভঙ্গের পরে সব পরিকল্পনাই আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে। সেই জন্য নিজেদের পালে হাওয়া টানতে বিজেপি নেতারাই ফের দাড়িভিট স্কুলে আন্দোলনে উৎসাহ দিচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে বিজেপিকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। ঘটনার পরে আমরা গ্রামবাসীদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছি। আবার পড়ুয়াদের স্বার্থ দেখে স্কুল খোলার জন্য তাদের বলেছি। কিন্তু তাঁদের কোনও দাবি সরকার মানছে না। তাই এ দিন ফের প্রতীকী তালা দেওয়া হয়েছে বন্ধ করেছে স্কুলে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন গ্রামবাসীরাই।’’

Advertisement

তৃণমূলের ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবালও বলেন, ‘‘দাড়িভিটের ঘটনার জন্য কী রথযাত্রা হচ্ছে? তা তো নয়। দু’টোকে মিলিয়ে দেখা ঠিক নয়। তা ছাড়া, দাড়িভিটের দাবি আদালতের বিচারাধীন। তা নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, রথযাত্রা স্থগিত হওয়ায় বিজেপি দাড়িভিটের বিষয়টি উস্কে দিচ্ছে কি না, তা ভবিষ্যৎই বলবে।

দাড়িভিট কাণ্ডের পর ওই এলাকায় আন্দোলন করেছিল বিজেপি। নিহত দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতি, মানবাধিকার কমিশন, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছে। তাই এই দুই পরিবারের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণেই বিজেপির পরামর্শ ছাড়া ওই দুই পরিবার ফের স্কুলে তালা ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেবে না বলেই ধারণা গ্রামবাসীদের অনেকের। বিজেপির দাবি, রাজ্য সরকারের উপর আস্থা হারিয়েই নিহত পরিবারের সদস্যরা আন্দোলন করছে।

নিহত তাপস বর্মণের মা মঞ্জুদেবীর অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা শর্ত সাপেক্ষে স্কুল খোলার চাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল খোলা হলেও আমাদের দাবি মানা হয়নি। তাই ফের আন্দোলন শুরু করতে হয়েছে।’’ তাপসের বাবা কাজল বর্মণ বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের দাবি ও শর্ত জানিয়েছিলাম। সে সব মানা হয়নি বলেই তালা ঝুলিয়েছি।’’ বিজেপির উত্তর দিনাজপুরে জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ সেনের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছেন রাজেশ সরকার ও তাপসের পরিবার। আর এই সরকার আদালতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েই বিজেপির রথ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে।’’ তিনি দাবি করেন, দাড়িভিট কাণ্ডের জেরে এলাকায় অনেকটাই পিছিয়ে তৃণমূল। গ্রামবাসীদের রীতিমতো ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূলের নেতাদের।

এসপি সুমিতকুমার বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হলে আমরা নিশ্চয় দেখব। ওই স্কুলে আজ কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন