টানা বন্ধে ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ না হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু, বন্ধ ওঠার পরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগাছা সরিয়ে ফের তরতাজা হয়ে উঠছে ‘কুইন অব হিলসের’ অধিকাংশ চা বাগান। শ্রমিকরাও দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে নেমে পড়ায় নতুন পাতাও উঁকি দিতে শুরু করেছে। তাই ‘অটাম ফ্লাশ’-কে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছেন দার্জিলিঙের চা বাগান মালিকরা। এর মধ্যেই কয়েকটি বাগান থেকে পাতা তুলে সুগন্ধী চা তৈরি করে বাজারে নমুনা পাঠানো হয়েছে। দেশি-বিদেশি ক্রেতারা তা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও দাবি চা মহলের।
টানা ১০৪ দিনের বন্ধে যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা রাতারাতি পূরণ করা সম্ভব নয়, মানছে চা মহল। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে বলে হা-হুতাশ করলে বিদেশের বাজারে ক্রমশ নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলি জাঁকিয়ে বসবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাই ‘যুদ্ধকালীন’ তৎপরতায় পাহাড়ের ৭০টি চা বাগান ‘অটাম ফ্লাশ’ বাজারে ছাড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। চা মহলের আশা, এই চায়ের দাম বিদেশের খোলাবাজারে কেজি প্রতি ১৮ হাজার টাকাও উঠতে পারে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান রাজীব লোচন বলেন, ‘‘বেশ কিছু চা বাগানে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর যে লড়াই দেখেছি, তা প্রশংসনীয়। রোহিণী, ওকাই, গ্লেনবার্ন, কলেজ হিলস গিদ্দে পাহাড়, সৈরিনির মতো বেশ কয়েকটি বাগান ‘অটাম ফ্লাশ’ বাজারে ছাড়তে তৈরি।’’
সাধারণত ফার্স্ট ফ্লাশ এবং সেকেন্ড ফ্লাশের উপরেই বেশি নির্ভর করে দার্জিলিং চা। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি বিপুল পরিমাণ রফতানিও হয়। কিন্তু এ বছর গুরুঙ্গদের আন্দোলনের জেরে বন্ধ ছিল বাগানগুলি। সেকেন্ড ফ্লাশ নিয়ে বাজার করতেই পারেনি দার্জিলিং। এর ধাক্কা সরাসরি পড়েছে বাগান মালিক ও শ্রমিকদের উপরে। তাই বন্ধ ওঠার পরপর পুজোর ছুটির তোয়াক্কা না করে কাজে নামেন শ্রমিকরা। ফলে দেওয়ালির সময়ে কচি পাতা উঁকি দিতে শুরু করে। চা মহলের কথায়, ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশই বাগানের হিরো। বিশেষ করে সেকেন্ড ফ্লাশের উৎপাদন অক্টোবর অবধি চলে। তাই বছরের শেষ পর্বের ‘অটাম ফ্লাশ’-এর উপরে কোনও দিনই জোর দেওয়া হয় না। কিন্তু এ বারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এই চায়ের উপরেই জোর দিয়েছেন সকলে। তাঁদের বক্তব্য, বিদেশের বাজারও ‘অটাম ফ্লাশ’ সম্পর্কে বিশেষ করে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সব মিলিয়ে, শীতের মুখে চায়ের কাপে তুফান তুলতে শরতের পাতাই এখন ভরসা দার্জিলিঙের।