সাঁতরাগাছি ঝিলে ভেসে উঠল মরা মাছ

প্রতি শীতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত সাঁতরাগাছি ঝিল। সেটির আসল মালিক দক্ষিণ-পূর্ব রেল হলেও ঝিল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ হাত তুলে নেওয়ায় বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে হাওড়া পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

দুরবস্থা: কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে সাঁতরাগাছি ঝিল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের ঝিলে পরপর দু’দিন মাছ মরে ভেসে উঠেছিল কয়েক সপ্তাহ আগে। এ বার সাঁতরাগাছি ঝিলের জলেও ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে উঠল মরা মাছ। অভিযোগ, কী ভাবে মাছগুলির মৃত্যু হল, তা না জেনেই সেই মরা মাছ বিক্রি হল স্থানীয় বাজারে। কী কারণে ঝিলের মাছের মৃত্যু ঘটল তা জানতে রাজ্য মৎস্য দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে হাওড়া পুরসভা জানিয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত দূষণ ও কচুরিপানার জন্য ঝিলের জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছের মৃত্যু ঘটেছে।

Advertisement

প্রতি শীতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত সাঁতরাগাছি ঝিল। সেটির আসল মালিক দক্ষিণ-পূর্ব রেল হলেও ঝিল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ হাত তুলে নেওয়ায় বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে হাওড়া পুরসভা। কিন্তু গত শীতের আগে সাঁতরাগাছি ঝিলের কচুরিপানা তোলা ও আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য হাওড়া সিটি পুলিশ, পুরসভা ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ঝিল পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিক মতো কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ার ফলেই মাছ ভেসে উঠছে।

সোমবার সকালে এলাকার মানুষেরা দেখেন, ঝিলের একধারে বহু মরা মাছ ভেসে উঠেছে। পাশাপাশি, বেশ কিছু মাছ অর্ধমৃত অবস্থায় জলের উপরে খাবি খাচ্ছে। ঝিলে মরা মাছ ভেসে ওঠায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঝিলের পাড়ে ভিড় জমে যায়। মরা মাছ ঝিল থেকে তোলার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। কেউ কেউ আবার ঝিলের মরা ও আধমরা মাছ স্থানীয় বাকসাড়া বাজারে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

ধরি মাছ: জাল দিয়ে মরা মাছ সংগ্রহ স্থানীয়দের। নিজস্ব চিত্র

মাছের মড়কের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা দেবকুমার সাহা মূলত জলে অক্সিজেন কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ঝিলটি সঠিক ভাবে সংস্কার না হওয়ায় আবর্জনা, পানায় ভরে গিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবের কারণেই মাছ মরছে। আমার ধারণা, কাল-পরশুর মধ্যে আরও মাছ মরে ভেসে উঠবে।’’ আর এক বাসিন্দা সমীর কুণ্ডু বলেন, ‘‘এলাকার সমস্ত বর্জ্য পুরসভার নর্দমা দিয়ে এই ঝিলে পড়ে। তাই ঝিলের জল দূষিত হয়ে উঠেছে।’’

ঝিলে মাছের মৃত্যুর ঘটনায় পুরসভা ও রেলকে সরাসরি দায়ী করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা ও রেলকে যৌথ ভাবে এলাকার সমস্ত নর্দমার জল সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করে ঝিলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত । কিন্তু আজও তা হয়নি।’’ সুভাষবাবু জানান, বিষয়টি তিনি পরিবেশ আদালতের নজরে আনবেন।

পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে হাওড়া পুরনিগমের কমিশনার তথা প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলছেন, “ঝিলে কা কারণে মাছের মড়ক লেগেছে, তার কারণ জানতে মৎস্য দফতরকে বলা হবে। বিশেষজ্ঞেরা মতামত দেওয়ার পরেই পদক্ষেপ করা হবে।’’ পুর কমিশনারের দাবি, ঝিলের যত টুকু সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার ব্যাপারে রেলের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যা হওয়ায় বিষয়টি আটকে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন