প্রতীকী ছবি।
মহাষষ্ঠীর সকাল। বাড়ির কাছেই পুজো মণ্ডপ। ন’বছরের ছোট্ট মেয়ে আলোর মনে অবশ্য আঁধার। নাগাড়ে কেঁদে চলেছে সে। আর বলছে, ‘‘বাবা কোথায় গেল? আমাকে নিয়ে গেল না কেন? আমার ফোনই বা বাবা ধরছে না কেন?’’
রবিবার বিকেলে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন আলোর বাবা শুভব্রত চক্রবর্তী। রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর কনস্টেবল শুভব্রত ছিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী। গত শনিবার কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে মাথায় গুলি করেন তিনি। প্রথমে কাঁথি হাসপাতাল তারপর কলকাতায় পাঠিয়েও শেষরক্ষা হয়নি।
পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল শুভব্রতর। তা আর হল না। সোমবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় কাচের গাড়িতে গ্রামে এল তাঁর দেহ। শুভব্রতর মৃত্যুসংবাদ
জানার পর থেকে তাঁর গ্রাম মহিষাদলের সরবেড়িয়া শোকস্তব্ধ। গ্রামের পুজোয় বোধন হয়েছে নমো নমো করে। ঢাক, মাইক— সব বন্ধ। গ্রামের এক মহিলা বললেন, ‘‘বাপি (শুভব্রতর ডাক নাম) বড় ভাল ছেলে ছিল। ক’দিন আগেও গ্রামে এসেছিল। বলেছিল পুজোয় আসবে। কী থেকে যে কী হয়ে গেল!’’ প্রতিবেশীরা জানালেন, প্রতিবার গ্রামের পুজোয় ঢাক বাজাতেন শুভব্রত। তাঁর গানের গলাও ছিল খাসা। সরবেড়িয়ার পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বিমলকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বাপি নেই, ভাবতেই পারছি না। সকলের মন খারাপ। পুজোয় শুধু নিয়মরক্ষাটুকুই হবে।’’
বাবা-মা-স্ত্রী-দুই মেয়ে নিয়ে সংসার বছর চল্লিশের শুভব্রতর। ছোট মেয়ে বন্যার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। তাঁকে আঁকড়ে শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা কেঁদেই চলেছেন। কথা বলার অবস্থায় নেই তিনি। শুভব্রতর কাকা তথা মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বললেন, ‘‘সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের পরে ভিসেরা করা হয়েছে। তারপর দেহ আনা হল।’’
পুলিশের দাবি, অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন শুভব্রত। তবে অবসাদের কারণ স্পষ্ট নয় পরিজন ও প্রতিবেশীদের কাছে। বরং তাঁরা জানাচ্ছেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই স্ত্রীকে ফোন করে পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা বলেছিলেন শুভব্রত। তারপর যে কী হয়ে গেল, সেই অঙ্কটাই মিলছে না। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।