চেন্নাই থেকে দেহ বনগাঁয় ফিরল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তৎপরতায়

‘সিএমও’? সে আবার কী? কেন, ‘চিফ মিনিটার্স অফিস’, যাকে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। কই এমন কিছু কখনও শুনিনি তো! এমন দফতরের কথা এত দিন সত্যিই জানা ছিল না বনগাঁ শহরের নয়া কামারগ্রাম এলাকার সরকার পরিবারের। কিন্তু এখন ওই দফতরকেই যাবতীয় মুশকিল আসান বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২৮
Share:

‘সিএমও’?

Advertisement

সে আবার কী?

কেন, ‘চিফ মিনিটার্স অফিস’, যাকে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।

Advertisement

কই এমন কিছু কখনও শুনিনি তো!

এমন দফতরের কথা এত দিন সত্যিই জানা ছিল না বনগাঁ শহরের নয়া কামারগ্রাম এলাকার সরকার পরিবারের। কিন্তু এখন ওই দফতরকেই যাবতীয় মুশকিল আসান বলে মনে করছেন তাঁরা।

এই পরিবারের ছেলে কৃষ্ণপদ সরকার (৩৫) ৮ ডিসেম্বর বেলা ১২টা নাগাদ চেন্নাইয়ের সি-২ থানা এলাকায় বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মারা যান। সেখান থেকে খবর আসে কুশল বিশ্বাস নামে কৃষ্ণপদবাবুর এক আত্মীয়ের কাছে। কিন্তু পরিবারের হাঁড়ির হাল। ভিনরাজ্য থেকে দেহ নিয়ে আসার মতো সামর্থ্য ছিল না কৃষ্ণপদবাবুর স্ত্রী রীতাদেবীর। মৃত স্বামীকে শেষবারের মতো দেখার আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু জট ছেড়েছে অপ্রত্যাশিত ভাবে।

বাড়িতে বসে কৃষ্ণপদবাবুর স্ত্রী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

রীতাদেবীর বাপের বাড়ি বাগদার রানিহাটি। তাঁর দাদা কুশল একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি লোকমুখে শুনেছিলেন, ভিন রাজ্যে বা দেশে বিপদ-আপদ ঘটলে সরকার নাকি দেহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। কিন্তু ওটুকুই। কে সাহায্য করে, তাদের সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ করতে হয়, সে সম্পর্কে কোনও খবর ছিল না প্রত্যন্ত গ্রামের পরিবারটির কাছে। কুশলবাবু যোগাযোগ করেন স্থানীয় গোবরাপুর এলাকার তৃণমূল নেতা নন্দদুলাল বসুর সঙ্গে। তাঁর কাছেও খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল, এমনটা নয়। নন্দবাবু বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজের কাছে পাঠান কুশলকে। ৯ ডিসেম্বর থানায় এসে সতীনাথবাবুর সঙ্গে দেখা করে ঘটনা জানান কুশল। সকাল তখন সাড়ে ১০টা হবে। আর চেন্নাই থেকে দমদম এয়ারপোর্টে কৃষ্ণপদবাবুর দেহ এসে যখন পৌঁছল, তখন রাত ১১টা ২০ মিনিট! সেখান থেকে সরকারি খরচেই দেহ গাড়ি করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। কী ভাবে সম্ভব হল গোটা প্রক্রিয়া?

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কুশলবাবুর কাছ থেকে ঘটনার কথা শুনে সতীনাথবাবু বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য চান। সুদীপবাবু আইসিকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক আধিকারিকের ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। আইসি সেই আধিকারিককে ফোনে ঘটনার কথা জানানোর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পদক্ষেপ করে।

নয়া কামারগ্রাম এলাকায় টিনের বাড়ি কৃষ্ণপদবাবুর। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসাব। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে বসে রীতাদেবী বলছিলেন, ‘‘এত বড় বিপর্যয়। স্বামীর মরামুখ দেখতে পাব, এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁদের সকলের চেষ্টায় সেটা সম্ভব হল।’’ কুশলবাবুর কথায়, ‘‘এত দ্রুততার সঙ্গে সব কিছু সম্ভব হবে, ভাবতেই পারিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বলে কিছু আছে, আদৌ সে কথা জানতাম না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন