নিহত মতিউর ওদের জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে

ছুটিতে বাড়ি এসেও তিনি নিয়মিত মাঠে যেতেন। পরনে হাফ প্যান্ট। পায়ে কেডস। কাকভোরে উঠে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও দৌড়তেন। আর মাঝে মাঝেই চিৎকার করতেন, ‘‘রান বয়েজ় রান।’’ ঠিক যেন খিদ্দা!

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

অনুশীলন: সাগরদিঘিতে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

না থেকেও তিনি আছেন!

Advertisement

গাঁয়ের মাঠে ছেলেরা দৌড়চ্ছে। দূর থেকে যেন তিনি বলছেন, ‘‘রান বয়েজ় রান...।’’

ছুটিতে বাড়ি এসেও তিনি নিয়মিত মাঠে যেতেন। পরনে হাফ প্যান্ট। পায়ে কেডস। কাকভোরে উঠে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও দৌড়তেন। আর মাঝে মাঝেই চিৎকার করতেন, ‘‘রান বয়েজ় রান।’’ ঠিক যেন খিদ্দা!

Advertisement

শনিবার বিকেলে ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে মাওবাদীদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল সিআরপিএফের একটি গাড়ি। তারপরেই শুরু হয় মাওবাদীদের গুলিবৃষ্টি। জবাব দিয়েছিল সিআরপিএফও। কিন্তু বিস্ফোরণ ও গুলিবৃষ্টিতে যে চার জওয়ান নিহত হন সাগরদিঘির বোখরার গ্রামের মির মতিউর রহমান তাঁদের অন্যতম। রবিবার সন্ধ্যেয় তাঁর দেহ আসে গ্রামের বাড়িতে। গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ।

কিন্তু সোমবার বোখরা গ্রামের জনা তিরিশেক যুবকের সকাল শুরু হল অন্য দিনের মতোই। তাঁরাও ‘মতিউর চাচার’ মতোই দেশের জন্য কাজ করতে চান। তাই সকাল-বিকেল অনুশীলন। এ দিনও তার অন্যথা হল না। ওই যুবকেরা বলছেন, ‘‘আমাদেরও মন ভাল নেই। কিন্তু চাচাকে দেওয়া কথা রাখতেই হবে। তিনি বলতেন, কখনও নিজেকে ফাঁকি দেবে না। তাই সকাল হতে না হতেই মাঠে চলে এসেছি। জানেন, আজও মনে হচ্ছিল, চাচা যেন আমাদের সঙ্গেই আছেন।’’

মির মতিউর রহমান আসলে ওঁদের জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওই যুবকদের এক জন রাহুল শেখ। তাঁর দুই মামা রয়েছেন সেনাতে। অনুশীলন শেষে ঘাম মুছতে মুছতে রাহুল বলছেন, “ প্রতি বার বাড়ি এসে মামারা পরীক্ষা করে দেখেন, আমি কতটা তৈরি হলাম। মতিউর চাচাকেও কথা দিয়েছি। এক বছরের মধ্যে সেনাতে আমি যোগ দেবই।’’

উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন আজিজুল শেখ। সেনাতে তাঁরও মামা, কাকা আছেন। আজিজুল বলছেন, “মাধ্যমিক পাশ করেই ঠিক করি, সেনাতে যাব। তাই এ দিন মনখারাপ সত্ত্বেও মাঠে এসেছি।”

অসিকুল শেখ, দিলবর শেখ, ওবাইদুর রহমানেরা বলছেন, ‘‘জানেন তো , আমাদের গ্রামের বহু লোক সেনাতে কাজ করেন বলে এ গ্রামকে অনেকেই আর্মি গ্রাম বলে। আমরা, মতিউর রহমান এই গ্রামের বাসিন্দা। আমরা ভয় পাই না। রবিবার মতিউর চাচার কবরে মাটি দিতে গিয়েছিলাম। সকালে ফের প্র্যাকটিসে চলে এসেছি। থেমে গেলে চলবে কী করে! ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন