আট বছরের বালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে তাকে দেওয়ালে আছড়ে খুন করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে তার সাজাও ঘোষণা হয়। বোলপুর আদালতের বিচারক ঘটনাটিকে চূড়ান্ত নৃশংসতার দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন।
বহরমপুর জেলে বন্দি সেই আসামি বিনয় মাঝি (২৭) তার পর থেকে বহু বার ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে চেয়েছে। কিন্তু ওই আসামির সেই ‘নৃশংসতা’র কথা শুনে আড়াই বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টের কোনও আইনজীবীই তার হয়ে সওয়াল করতে রাজি হননি। আইনজীবীদের বক্তব্য, যে-লোক আট বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে দেওয়ালে আছড়ে মেরে ফেলতে পারে, সে তো মানুষের পর্যায়েই পড়ে না। তার হয়ে আদালতে দাঁড়ানোর কোনও মানে খুঁজে পায়নি কৌঁসুলি শিবির। তাই জেল থেকে পাঠানো বিনয়ের চরম দণ্ড মকুবের আপিল মামলাটি এত দিন হাইকোর্টে এত দিন পড়েই ছিল।
কিন্তু আইন যেমন পীড়িতের জন্য, একই ভাবে অভিযুক্ত, এমনকী দণ্ডিতের জন্যও। ধর্ষিত ও নিহত মেয়েটির প্রতি মমতায় যে-সব আইনজীবী বিনয়ের হয়ে মামলা লড়তে চাইছিলেন না, আইনের নির্দেশে তাঁদেরই এক জনকে আপিল মামলায় আসামির হয়ে সওয়াল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠার পরে দেখা যায়, আসামির পক্ষে কোনও আইনজীবীই নেই। বিচারপতি জানতে পারেন, আসামির আপিল মামলাটি পড়ে আছে আড়াই বছর ধরে। তার শুনানি হচ্ছে না স্রেফ কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে চাইছেন না বলে। বিচারপতি তখন মামলাটি রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দেন। নির্দেশ দেন, বিনয়ের পক্ষে এক জন আইনজীবীকে নিয়োগ করতেই হবে। তারই ভিত্তিতে বিনয়ের পক্ষ নিয়ে আদালতে সওয়াল করার জন্য দু’দিন আগে হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়োগ করেছে লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি। আগামী বুধবার বিচারপতি পাথেরিয়ায় ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা।
ঘটনাটা ঠিক কী?
বীরভূম জেলা পুলিশ জানিয়েছে, নানুর থানার গোবিন্দপুর গ্রামের এক বাসিন্দা ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর অভিযোগ জানান, তাঁর আট বছরের মেয়েকে নিয়ে আগের দিন তিনি পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন নবান্ন উৎসবে যোগ দিতে। তার পর থেকে তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই রাতেই স্থানীয় ব্রাহ্মণখণ্ড এলাকার মিয়াঁপুকুর থেকে ওই নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জানায়, শিশুটিকে ধর্ষণ করে দেওয়ালে আছাড় মেরে খুন করা হয়েছে। তদন্তকারীরা এলাকার কয়েক জন বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, মিয়াঁপুকুর এলাকার বাসিন্দা বিনয় লজেন্সের লোভ দেখিয়ে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই বালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ বিনয়কে গ্রেফতার করে জেরা করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে বিনয় এক সময় ভেঙে পড়ে দোষ স্বীকার করে নেয়। বোলপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ২০১৩ সালের ২৬ অগস্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ফাঁসির আদেশ দেয়।
কৌঁসুলি শিবিরের বক্তব্য, স্বাভাবিক নিয়মে প্রাণদণ্ডের সব মামলাই উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা। বিনয়ের ক্ষেত্রে আইনজীবীরা লড়তে চাননি ঘটনাটির নৃশংসতার জন্যই। এখন আইনজীবীর ব্যবস্থা হওয়ায় বিষয়টি স্বাভাবিক আইনি পথেই এগোতে পারবে।