প্লাবিত: জলের তোড়ে পুরশুড়ায় উল্টে গেল লরি। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন করে ভারী বৃষ্টি হয়নি। জল ছাড়া কমিয়েছে ডিভিসি। ফলে, রাজ্যের সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। কিন্তু বেশির ভাগ নদী-পুকুর-খাল এখনও টইটম্বুর থাকায় প্লাবিত এলাকাগুলি থেকে সে ভাবে জল নামছে না। তাই মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত। বাড়ছে মৃত্যুও।
তবে, সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি না-হওয়ায় স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। শনিবার নবান্নে পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জল ছাড়া কমেছে। গ্রাম থেকে জল নামতে শুরু করেছে।’’ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব সুরেশ কুমারও। ডিভিসিরও দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। পাঞ্চেত থেকে ন্যূনতম জল ছাড়া হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতিতে শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যে ২৮ জন মারা যান বলে নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছিল। সুরেশ কুমার জানান, শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। কিন্তু বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা কিছুটা বেশি। বাঁকুড়ার বারিকুলের হাতকাটা এলাকায় বন্যার জলে ভরা সেচখালে স্নান করতে নেমে ডুবে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ার। হুগলির আরামবাগ মহকুমাতেই মারা যান চার জন। তার মধ্যে শুক্রবার খানাকুলের মাইনানে বাড়ির সামনে জমা জলে ডুবে মারা যান এক প্রৌঢ়। ওই রাতে পুরশুড়ার তকিপুরে জলমগ্ন রাস্তায় তলিয়ে যান এক যুবক। শনিবার দেহে মেলে। খানাকুলের পূর্ব রাধানগর গ্রামের এক মহিলা এবং এক কিশোরী রাস্তায় জলের তোড়ে ভেসে যান। পরে তাঁদের দেহ মেলে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের অবস্থা এখনও শোচনীয়। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের একতলার সব ওয়ার্ডেই কোমরসমান জল। বিদ্যুৎ নেই। হাসপাতালের এসএনসিইউ সরানো হয়েছে পাশের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। শনিবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা-১ ও রামনগর-১ ব্লকে। জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন গ্রামবাসী। পর্যাপ্ত ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভ বাড়ছে হাওড়া ও হুগলির প্লাবিত এলাকাগুলিতেও। এ দিন নতুন করে জল ঢুকেছে আমতা-২ ব্লকের কাশমলি পঞ্চায়েত এলাকায়। পূর্ব বর্ধমানের রায়না, মাধবডিহি, কাটোয়া এবং কেতুগ্রামের একাংশ এখনও জলমগ্ন।
বন্যা পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের জলমগ্ন এলাকায় ত্রিপল বিলি করতে গিয়ে লকেট বলেন, ‘‘আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তা হলে আশা করি বন্যা হবে না। তৃণমূল, সিন্ডিকেট ও বালি-মাফিয়ারা বাঁধ কেটে বালি তুলে নিচ্ছে। নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমছে। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি করেনি।’’ যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের মতো নদী সংস্কার কোনও রাজ্য করেনি। বালি-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমরাই ব্যবস্থা নিয়েছি।’’