কোচবিহার থেকে বাদুড়িয়া— ইতিমধ্যেই রাজ্যে জ্বরে মারা গিয়েছেন চার জন। বাদুড়িয়ার কাসের আলি মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, মৃত্যুর অন্যতম কারণ ‘ডেঙ্গি শক’। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, মৃতদের চিকিৎসা-নথি যাচাই করে ডেঙ্গি পাওয়া যায়নি। তা হলে? বুধবার দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য ছিল, ‘আরও যাচাই করে দেখতে হবে।’ অর্থাৎ যত দিন না তা যাচাই হচ্ছে, স্বাস্থ্য দফতরের খাতায় মৃত্যুর কারণ থাকবে ‘অজানা’!
এ দিন সন্ধ্যায় অবশ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরে মৃত্যুর কারণ বিশদে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা। এ দিন স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য জুড়ে ‘অজানা’ জ্বর নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি যে হাসপাতালেই রোগী ভর্তি হন না কেন, মৃত্যু ঘটলে তার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দফতরের থাকতে হবে।
‘অজানা’কে জানার এই নির্দেশের ফল নিয়ে অনেকেই অবশ্য সন্দিহান। কারণ, গত তিন বছর ধরে ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা যে সব রোগী সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন, তাঁদের বড় অংশের রোগ নির্ণয় হয়নি।
‘অজানা’র অপকারিতা
• রোগমুক্তির উপায় জানা যায় না।
• কী ধরনের চিকিৎসা জরুরি, তা-ও স্পষ্ট হয় না।
• রোগ কী ভাবে ছড়ায়, অজানা থেকে যায়।
• কী কী সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, অজানা থাকে সেটাও।
• সংক্রমণ আরও মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ডেঙ্গিতে কমবেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার। যদিও রাজ্যের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছিল ৪৬ জনের। আক্রান্ত ৩৭ হাজার ৭৪৬। তা হলে বাকিরা মারা গেলেন কোন রোগে? সরকারি ব্যাখ্যা, ‘অজানা’ জ্বরে। অথচ তাতে কত জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, ক’জন মারা গিয়েছিলেন, সেই তথ্যও স্বাস্থ্য ভবনের কাছে নেই। এক কর্তা বলেন, ‘‘যে রোগ চিহ্নিতই হয়নি, সেই রোগীর তথ্য আমরা রাখি না।’’
এ বারও জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্তের ভিড় বাড়ছে। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় আক্রান্ত ১১, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩০, কলকাতার আইডি হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন জ্বরের রোগী। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর সংখ্যা অন্তত ১৫।
আরও পড়ুন: ‘ডেঙ্গি’তে মৃত্যু হাওড়ার যুবকের
সরকারি চিকিৎসকদের একাংশই জানাচ্ছেন, কলকাতার অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তদের পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর জেলার হাসপাতালগুলিতে কড়া ‘নির্দেশ’, ডেঙ্গি আক্রান্তকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা চলবে না।
কিন্তু বছর বছর হওয়া এই জ্বর যদি ‘অজানা’ই হয়, তা হলে কী সতর্কতা নিতে হবে, তা মানুষকে জানানো হচ্ছে কি? স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজানা জ্বরে মৃত্যু হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তাই আসল কারণ খতিয়ে দেখা যাচ্ছে না। তবে, আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।’’
ডেঙ্গি ও মশাবাহিত অন্য রোগ সম্পর্কে রাজ্য তথ্য দিচ্ছে না বলে গত বছর অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘যে রাজ্যে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে একটি রোগ কী ভাবে বছরের পর বছর ‘অজানা’ থেকে যায়, তা মাথায় ঢুকছে না।’’
মালদহ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং সহ উত্তরবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।