গুজরাতের চাপে সরছে না বাংলার নিম্নচাপ

মৌসম ভবনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সচরাচর আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলে এই ভাবে একই সঙ্গে একই শক্তির নিম্নচাপ তৈরির নজির বেশ কম। কিন্তু যখন হয়, তখন এই ভাবেই দুই নিম্নচাপের শক্তি বাড়ে এবং সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। গুজরাত এবং পশ্চিমবঙ্গে যে দুটি নিম্নচাপ এই মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে, সে দু’টিই তৈরি হয়েছে স্থলভূমির উপরে। তাই তারা সমুদ্র থেকে অনেক বেশি জলীয় বাষ্প টেনে নিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

মোদীর গুজরাত আর দিদির বাংলার মধ্যে দড়ি টানাটানির জেরে দুই রাজ্যই এখন বন্যার মুখে!

Advertisement

আবহাওয়া দফতর বলছে, পশ্চিম ভারতে গুজরাতের উপরে অবস্থান করছে একটি নিম্নচাপ। পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ডের উপরে রয়েছে আর একটি। দু’টি নিম্নচাপের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেছে একটি আড়াআড়ি অক্ষরেখা। যার ফলে দুই নিম্নচাপের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রবল দড়ি টানাটানি। এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতির জন্য দু’টি নিম্নচাপের কেউই শক্তি হারাতে রাজি নয়। পশ্চিমবঙ্গ আর গুজরাত উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে জলীয় বাষ্প ঢুকছে হু-হু করে। আর তাতেই ভাসছে দুই রাজ্যের বহু এলাকা। গুজরাত ও সংলগ্ন রাজস্থানের কয়েকটি জেলায় বন্যা মোকাবিলায় সেনা ডাকতে হয়েছে। চারটি হেলিকপ্টারও নেমেছে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে।

মৌসম ভবনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সচরাচর আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলে এই ভাবে একই সঙ্গে একই শক্তির নিম্নচাপ তৈরির নজির বেশ কম। কিন্তু যখন হয়, তখন এই ভাবেই দুই নিম্নচাপের শক্তি বাড়ে এবং সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। গুজরাত এবং পশ্চিমবঙ্গে যে দুটি নিম্নচাপ এই মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে, সে দু’টিই তৈরি হয়েছে স্থলভূমির উপরে। তাই তারা সমুদ্র থেকে অনেক বেশি জলীয় বাষ্প টেনে নিচ্ছে। ফলে বৃষ্টিও হচ্ছে বেশি। সংযোগকারী অক্ষরেখাটি দুর্বল হলেই দু’টি নিম্নচাপ ধীরে ধীরে শক্তি হারাবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। কিন্তু তার জন্য কত দিন লাগতে পারে? তাঁদের অনেকে বলছেন, হঠাৎ যেমন ওই অক্ষরেখাটি তৈরি হয়েছে, হঠাৎই তা নিষ্ক্রিয় হবে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, গুজরাতের নিম্নচাপটির জন্য বাংলার নিম্নচাপ তাড়াতাড়ি পশ্চিমে সরে যেতে পারছে না। আজ, মঙ্গলবার রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বেশি বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে। সঞ্জীববাবু জানাচ্ছেন— আগামীকাল, বুধবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হতে পারে।

আরও পড়ুন:জল ছাড়া নিয়ে শুরু টানাপড়েন

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ বছর জুনে তেমন বৃষ্টি না-হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি হয়েছিল। গত সপ্তাহেও বর্ষার ঘাটতি ছিল অনেকটাই। কিন্তু গত চার দিনের প্রবল বৃষ্টি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি কার্যত মিটিয়ে এনেছে। ১ জুন থেকে সোমবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি মাত্র ১ শতাংশ। আজ, মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টি হলে সেই ঘাটতি মিটে অতিবৃষ্টির খাতায় এই এলাকার নাম উঠে যেতে পারে।

আবহাওয়া দফতর বলছে, নিম্নচাপটি তার স্বাভাবিক নিয়মেই ঝাড়খণ্ডের দিকে এগিয়ে যাবে। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে এমনিতেই এই এলাকার নদীগুলি টইটম্বুর। ঝা়ড়খণ্ডে আরও বৃষ্টি হলে সব জল নেমে আসবে দক্ষিণবঙ্গে। বাঁধ বাঁচাতে বিপুল জল ছাড়তে হবে দুর্গাপুর, কংসাবতী এবং ময়ূরাক্ষী ব্যারেজ থেকে। ফলে এই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement