নিম্নচাপের পথ বদল, বৃষ্টিভেজা দক্ষিণবঙ্গ

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, রবিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
Share:

অন্ধ্র-ওডিশা উপকূল দিয়ে ডাঙায় ঢোকার কথা ছিল তার। কিন্তু উপকূলের কাছাকাছি এসেই পথ বদলাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ। তার ফলেই ডিসেম্বরে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের একাংশে। আবহবিদেরা জানান, নিম্নচাপের দাপটে শীতের দফারফা হয়েই গিয়েছে। তার উপরে এই ভারী বৃষ্টিতে আরও আতান্তরে প়়ড়তে পারেন উপকূলীয় জেলার বাসিন্দাদের অনেকেই। ক্ষতি হতে পারে সব্জি, ফুল চাষেরও।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, রবিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায়। শনিবার সকাল থেকেই কলকাতায় দফায় দফায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ সারাদিন ধরেই কার্যত শ্রাবণ মাসের মতো মেঘলা থেকেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি (১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হলেও দিনের তাপমাত্রা ছিল অনেক কম। এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি কম। দিনের বেলা স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডা মালুম হলেও এটা শীতের স্বাভাবিক চরিত্র নয়। এই নিম্নচাপের বিপত্তি কাটিয়ে ফের কবে শীত নিজের ছন্দে ফিরবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহবিদেরা।

উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে মৌসম ভবন জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে গভীর নিম্নচাপটি পারাদ্বীপ থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল। সেটি ওডিশা উপকূল ধরে পশ্চিমবঙ্গ এবং লাগোয়া বাংলাদেশের দিকে বয়ে যাবে। এই যাত্রাপথে সে নিজের শক্তি ধরে রাখবে। বাংলার উপকূলের কাছাকাছি আসার পর থেকে সে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে। এক আবহবিজ্ঞানী জানান, প্রাথমিক ভাবে নিম্নচাপটির গতিপথ দেখে মনে হয়েছিল, সে অন্ধ্র-ওডিশা দিয়ে শনিবার স্থলভূমিতে ঢুকবে, শুকনো হাওয়া গিলে ক্রমশ দুর্বল হবে। কিন্তু আচমকাই পথ বদলেছে সে।

Advertisement

বর্ষাতি: বৃষ্টি-সাজে খুদে। বেলুড়ে শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

কেন এমন পথ বদল? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক পদস্থ বিজ্ঞানীর মতে, এই পথ বদলের পিছনে মূলত দু’টি প্রাকৃতিক কারণ দায়ী। এক, উত্তর ভারতের উপরে একটি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা জোলো হাওয়া যা কাশ্মীর দিয়ে এ দেশে ঢোকে) রয়েছে। সেই ঝঞ্ঝা থেকে নির্গত ঠান্ডা ভারী বাতাস নিম্নচাপটিকে উপকূলের কাছে আসতে দিচ্ছে না। দুই, বঙ্গোপসাগরের উপরে বায়ুমণ্ডলের উপরের ও নীচের স্তরে বায়ুপ্রবাহের শক্তির তারতম্য। তার ফলে সেটি ক্রমশ ওডিশার দিক থেকে এ রাজ্যের দিকে সরে আসছে। ‘‘হাওয়ার যা অভিমুখ, তাতে গভীর নিম্নচাপটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে যাবে বলেই মনে হচ্ছে,’’ মন্তব্য ওই আবহবিজ্ঞানীর।

আবহবিদদের একাংশ বলছেন, উপকূলের কাছে এসে প়়ড়লে নিম্নচাপটি শক্তি খোয়াতে পারত। কিন্তু দূরে থাকার ফলে সেই শক্তি খোয়াচ্ছে না এবং আরও ২৪ ঘণ্টা সে শক্তি ধরে রাখতে পারবে। রবিবার গভীর রাতে উপকূলের কাছে আসার পরেই তার শক্তিক্ষয় শুরু হবে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি এই নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে গেলে ফের আকাশ পরিষ্কার হবে। তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে বলে আশা আবহবিদদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন