অনুগামীদের দিয়ে বিদ্রোহে শান মানসের

তাঁর অনুগামী প্রদেশ কংগ্রেসের চার সাধারণ সম্পাদক দলের দুরবস্থার জন্য প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে দায়ী করে তাঁর অপসারণ দাবি করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও খড়গপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১২
Share:

তাঁর অনুগামী প্রদেশ কংগ্রেসের চার সাধারণ সম্পাদক দলের দুরবস্থার জন্য প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে দায়ী করে তাঁর অপসারণ দাবি করলেন। আর তাঁর ভাই তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া এবং সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডা-সহ স্থানীয় এক ঝাঁক নেতা-কর্মী পা বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূলের দিকেই। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদ নিয়ে বিতর্কের পরে আপাতত দলে থেকেই কংগ্রেসকে বিব্রত করার কৌশলে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন মানস ভুঁইয়া!

Advertisement

বিধানসভা ভোটের আগে সবংয়ে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় মানসবাবুর পাশাপাশি তাঁর ভাই বিকাশ, অমলবাবুদের নামেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। হাইকোর্টে তাঁদের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে এসে বিকাশ-অমলেরা তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে শাসক দলের একটি সূত্রের খবর। সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমলবাবুই ওই বিধানসভা এলাকায় মানসবাবুর ডান হাত। তাঁদের তৃণমূলে পাঠিয়ে মানসবাবুই আসলে শাসক দলকে বার্তা দিচ্ছেন বলে মনে করছে কংগ্রেস।

বিকাশ ও অমলবাবুর ফোন বন্ধ থাকায় বুধবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও প্রকাশ্যে দল ছাড়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে কংগ্রেসের ব্লক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাইতি বলেছেন, “পাঁচ মাসেরও বেশি দলের সবংয়ের নেতারা ঘরছাড়া। কর্মীরাও বিপর্যস্ত। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে প্রদেশ নেতারা এক বারও সবং এলেন না। তাই আমরা তৃণমূলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।” তবে শাসক দলে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি যে খুব মসৃণ না-ও হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়ে তৃমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেছেন, ‘‘সবংয়ের মাটিতে মানসবাবুরা আমাদের উপরে লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন। এখন তাঁরা তৃণমূলের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছেন! তবে এর জন্য সবংয়ের মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব মানসবাবুদের দিতে হবে!”

Advertisement

স্বয়ং মানসবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তাঁর মন্তব্য, “বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি যে, বিকাশ ভুঁইয়ারা তৃণমূলে যোগদানের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন দলের নেতা-কর্মীরা সবং-ছাড়া। দুর্দিনে দল পাশে দাঁড়ায়নি। মানসবাবুর সংযোজন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে কেউ দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না!” বিকাশ-অমলবাবুরা তাঁর সঙ্গে কথা না বলে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক করছেন, এ কথা অবশ্য মানসবাবু ছাড়া কেউ বিশ্বাস করতে রাজি নন! মানসবাবু এই দাবিও করেছেন, ‘‘আমি দল ছাড়ছি না।’’

কলকাতা প্রেস ক্লাবে আবার এ দিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে মানস-ঘনিষ্ঠ প্রদেশ কংগ্রেসের চার সাধারণ সম্পাদক কনক দেবনাথ, অজয় ঘোষ, মনোজ পাণ্ডে এবং সংখ্যালঘু শাখার প্রধান খালেদ এবাদুল্লা যৌথ ভাবে অভিযোগ করেন, প্রতিদিনই কংগ্রেস কর্মীরা দল ছাড়ছেন। মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো কংগ্রেসের শক্তি ঘঁটিতেও জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্য, এমনকী মহিলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী কবিতা রহমানও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কনকবাবুর কথায়, ‘‘যিনি নিজের জেলা রক্ষা করতে পারেন না, তিনি কী করে বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের রক্ষা করবেন?’’ তাঁরা অধীরকে সরানোর দাবি জানিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর কাছে চিঠি পাচ্ছেন বলে এআইসিসি সদস্য অজয়বাবু জানান। বিক্ষুব্ধ নেতাদের দাবি, ‘‘আমরা কংগ্রেস বাঁচাতে লড়াইয়ে নেমেছি।’’

অধীর অবশ্য এ সবে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, ‘‘গরু-ছাগলেরা কোথায় কে কী বলছে, তার কোনও জবাব দেব না। কেউ দলে থাকতে না চাইলে আমি কী বেঁধে রাখব? যাঁরা তৃণমূলের কথায় চলছেন, তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিলেই ভাল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন