সিঙ্গুরের কাছেই ঘুরপথে বিক্রি হচ্ছে খাসজমি

সরকারি জমিতে মাফিয়াদের থাবা! শিল্পস্থাপনে রাজ্য সরকার বারবার ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’-এর কথা বলে। কিন্তু রাজ্যে শিল্পস্থাপনের উপযোগী জমি বেশি নেই, শিল্পকর্তাদের এই অভিযোগ পুরনো।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০৪:৪৯
Share:

জট: সিঙ্গুরের এই জমি নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সরকারি জমিতে মাফিয়াদের থাবা!

Advertisement

শিল্পস্থাপনে রাজ্য সরকার বারবার ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’-এর কথা বলে। কিন্তু রাজ্যে শিল্পস্থাপনের উপযোগী জমি বেশি নেই, শিল্পকর্তাদের এই অভিযোগ পুরনো। অথচ, হুগলিতে প্রশাসনের নাকের ডগায় ডানকুনি শিল্পাঞ্চল ঘেঁষা চণ্ডীতলায় প্রায় এক হাজার বিঘে খাসজমি ঘুরপথে দখল হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ, শাসকদলের নেতাকর্মীদের মদতে জমি-মাফিয়ারা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া ওই জমি প্লট করে বিক্রি করে দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসন ও স্থানীয় বিধায়কের দ্বারস্থও হয়েছেন। কিন্তু সুরাহা মেলেনি।

চণ্ডীতলায় ওই জমি জয়কৃষ্ণপুর ও লাগোয়া কয়েকটি মৌজায় ছড়ানো। এলাকাটি সিঙ্গুর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকার সিঙ্গুরে চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ, সিঙ্গুর লাগোয়া জমি বিনা বাধায় কী ভাবে দখল হচ্ছে, সেই প্রশ্নই তুলছেন গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যেই ওই জমির বেশ কিছুটা অংশ পাঁচিলে ঘিরে ফেলা হয়েছে। হাত-বদলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশ জড়িত বলেও অভিযোগ।

Advertisement

জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে দফতরের ব্লক আধিকারিককে দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। চণ্ডীতলা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জমির দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশই ব্যবস্থা নেয়নি।’’ এক পুলিশ কর্তার দাবি, তদন্ত চলছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা হবে। বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই জমি বিক্রির বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছিল কিনা মনে নেই। তবে কানে যখন এসেছে, প্রশাসনকে নিশ্চয়ই জানাব।’’

জমি নিয়ে টানাপড়েন পুরনো। আশির দশকে কলকাতার দুই ব্যবসায়ী শিল্পস্থাপনের জন্য ওই জমি কেনা শুরু করেন। ভুল বুঝিয়ে জমি কেনা হচ্ছে, অভিযোগ তুলে চাষিরা প্রতিবাদ করেন। কিন্তু জমি কেনা আটকানো যায়নি। অথচ, শিল্পস্থাপনও হয়নি। সরকারি নিয়মে শিল্পের জমি কিনে আট বছর ফেলে রাখলে অধিগ্রহণ করে ‘খাস’ ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন বাম সরকার ২০১০ সালে জমিটিকে ‘খাস’ ঘোষণা করে। পরের বছরই রাজ্যে পালাবদল হয়। তারপরে গ্রামবাসীরা আশা করেছিলেন, ওই জমিতে শিল্পস্থাপনে সরকার উদ্যোগী হবে। সেই আশা দূরঅস্ত্। উল্টে বিক্রি হচ্ছে সরকারি জমি! এক স্থানীয়ের আক্ষেপ, ‘‘আর্জি কে শুনছে? শাসকদলের কেষ্টবিষ্টুরা জমি বিক্রির নেপথ্যে রয়েছেন। তাই পুলিশ প্রশাসন সব জেনেও হাত গুটিয়ে রয়েছে।’’

এখন দেখার, কোন পথে জমি উদ্ধার হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন