চা শ্রমিকদের মজুরি দিতে রাজ্যের দ্বারস্থ মালিকরা

নোট বাতিলের গেরোয় জট চা শিল্পেও। চা বাগান মালিকরা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারায় শ্রমিকদের মজুরি কবে দেওয়া যাবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

বৃহস্পতিবার ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানে।— নিজস্ব চিত্র

নোট বাতিলের গেরোয় জট চা শিল্পেও।

Advertisement

চা বাগান মালিকরা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারায় শ্রমিকদের মজুরি কবে দেওয়া যাবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বৃহস্পতিবার বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন এবং শ্রমিকদের তরফ থেকে এ বাপারে হস্তক্ষেপের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। এ দিন দু’পক্ষই নবান্নে এসে এই দাবি জানান। তাঁদের বক্তব্য, একদিকে টাকা তোলা ও অন্যদিকে খুচরো-এই দুই সমস্যায় পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চা শ্রমিকরা কবে মজুরি পাবেন তা একেবারেই স্পষ্ট নয়।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে অসমের পাঁচ লক্ষ ও পশ্চিমবঙ্গের আড়াই লক্ষ চা শ্রমিক সমস্যায় পড়েছেন। চা শ্রমিকদের সমস্যা হলে রাজ্য সরকার ছেড়ে দেবে না। অনাহারে কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে আমরা ছাড়ব না। শ্রমিক ও মালিক দু’পক্ষই এখানে এসেছিলেন। আমি মুখ্যসচিবকে বলেছি বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা বলতে।’’

Advertisement

তরাই, ডুয়ার্স এবং দার্জিলিঙের অধিকাংশ বাগানেই সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক মজুরি দেওয়া হয়। সে কারণেই অসুবিধা এত তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ দিন জলপাইগুড়িতে চা মালিকদের সংগঠনগুলির সম্মিলিত মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অব প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা সিসিপিএও জরুরি বৈঠক করে। সিসিপিএর উত্তরবঙ্গের মুখপাত্র অমিতাংশু চক্রবর্তী বৈঠক শেষে বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ পরিস্থিতির কথা শ্রমিক সংগঠন এবং সরকারপক্ষকে লিখিত আকারে জানাবে। শ্রমিকদের মজুরির জন্য বরাদ্দ সব বাগানের ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্টে মজুত থাকলেও তা তোলা যাচ্ছে না বলেই এই অসুবিধা।’’

অন্যদিকে বাগান মালিকদের টাকা তুলতে না পারার সমস্যা শ্রমিকদেরকে বোঝানো হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনের রাজ্য সহ সভাপতি তেজকুমার টোপ্পো বলেন, ‘‘মালিকপক্ষের টাকা তুলতে সমস্যা হওয়াটা অমূলক নয়। তবে ব্যাঙ্ককে ঢাল করে কোনও অসাধু বাগান মালিক যদি অযথা মজুরি দিতে দেরি করে তাহলে আমরা তারও প্রতিবাদ করব।’’ রাজ্য টি ডাইরেক্টরেটের পক্ষ থেকেও চা শিল্পের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে দাবি করা হয়েছে। সদস্য সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জরুরি পরিস্থিতির থেকেও খারাপ অবস্থা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে নতুন নোট পাঠানো হবে বলে দাবি করা হলেও আদৌ তা আসেনি।’’

সব চা বাগানেই শ্রমিকদের মজুরির টাকা যোগাড় করতে বাগানের কর্তাব্যক্তিরা ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেও টাকার সংস্থান করতে পারছেন না। ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানে প্রতি মাসের ১৫ তারিখ মজুরির টাকা দেওয়া হয়। মজুরি মেটাতে এই বাগানে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে কিছুতেই ঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরির টাকা মেটানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলেন এই চা বাগানের ম্যানেজার সৌমেন্দু রায়। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা জানালেন ১৬ বা ১৭ তারিখের আগে কিছু করা যাবে না। এই অবস্থা হলে ১৫ তারিখ শ্রমিকদের মজুরি দেব কী ভাবে?”

তাসাটি বাগানের বড়া লাইনের শ্রমিক নন্দিতা ওঁরাও ও বিমলা লোহরা পাতা তুলতে তুলতে বলেন, “মাসে একবার মজুরির টাকা পাই। শুনতে পাচ্ছি এ বার কোন দিন মজুরি পাব তার ঠিক নেই। আজ বাগানবাবুদের বললাম, কিছু টাকা দিলেও আপাতত চালানো যাবে।”

বীরপাড়া বাগানের শ্রমিক অর্জুন ওরাঁও বলেন, “আমার কাছে একটি ৫০০ টাকার নোট ছিল, সেটা নিয়ে দু’দিন ধরে দোকানে দোকানে ঘুরেও জিনিসপত্র আনতে পারিনি। আমরা শ্রমিক, তাই কোনও দোকানদার বিশ্বাস করে আমাদের বাকিতে চাল-ডাল দেয় না। এক সপ্তাহ টাকা না পেলে পাঁচ জনের পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।”

একই ছবি পাহাড় ও ডুয়ার্সের অন্যান্য চা বাগানে। সর্বত্রই পেটের চিন্তা ঘুম কেড়েছে শ্রমিকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন