শনিবারেও ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল এক জনের। এ দিন বেলঘরিয়ার একটি নার্সিংহোমে পিঙ্কি দাস নামে ১৮ বছরের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। তিনি বরাহনগরের সতীন সেন নগরের বাসিন্দা ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন পিঙ্কি। শুক্রবার রাতে তাঁকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ওই নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। এ দিন সকালে মারা যান পিঙ্কি। এই নিয়ে রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট ১৬ জনের মৃত্যু হল।
স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এটিকে এখনও ডেঙ্গিতে মৃত্যু বলে মানতে চায়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষানিরীক্ষা সংক্রান্ত আরও কিছু কাগজপত্র না দেখে তাঁরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাবেন না। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দাবি, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ২,৫৬৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ১৫।
কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে এ দিনও উপচে পড়েছে জ্বরের রোগী। বেলেঘাটার আইডি কর্তৃপক্ষ শয্যার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করতে ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ। হাওড়া জেলা হাসপাতালে অজানা জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত দু’দিনে ওই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পেট খারাপ-সহ অন্যান্য রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের শয্যা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদের মেঝেতেও জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। জ্বরের রোগীদের জন্য ওই হাসপাতালে একটা বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে।
এ দিন ফের হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ ভাস্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল বেলুড়ের অগ্রসেন কলেজ পরিদর্শনে যায়। ভাস্করবাবু জানান, ওই কলেজের একটি জলের রিজার্ভারের ভিতর ও একটি ফাঁকা পাত্রে জমা জলে প্রচুর লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। যা প্রাথমিক ভাবে ডেঙ্গি রোগের বাহক এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা বলে পুরসভার চিকিৎসকরা মনে করছেন।
বিধাননগর পুর নিগম এলাকাতেও অনেক জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। বাগুইআটিতে পূর্ত দফতরের অফিসে এ দিন আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। দফতরের আশপাশ থেকে জমা জল ও আগাছা দ্রুত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরবঙ্গেও। শিলিগুড়িতে এ দিন আরও তিন জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। এ দিন শিলিগুড়ি পুর এলাকায় নতুন করে যে দু’জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে তার মধ্যে রয়েছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিভাগের মেয়র পারিষদ শঙ্কর ঘোষের এক আত্মীয়া। তিনি সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন। এখান থেকে জ্বর নিয়ে শহরে ফেরেন। অপর জন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক তরুণী। দার্জিলিং জেলায় সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৯।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি জ্বরের রোগীদের মধ্যে এক জনের বেসরকারি ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় ডেঙ্গি পজিটিভ রিপোর্ট এলেও স্বাস্থ্যকর্তারা তা মানতে চাননি। তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে ফের ওই মহিলার রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ সেই রিপোর্ট পাওয়ার আগে তাঁরা নিশ্চিত ভাবে বলতে রাজি নন যে, ওই মহিলা ডেঙ্গিতেই আক্রান্ত।
একই ভাবে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন জয়পুরের মুরলীগঞ্জের এক বাসিন্দা। বেসরকারি ল্যাবরেটরির রিপোর্টে তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। দিন চারেক আগে বর্ধমান থেকে ফিরে ওমরের জ্বর হয়। তার পরেই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাঁকেও অবশ্য এখনও ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে মানেনি স্বাস্থ্য দফতর। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত শিশুর ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না বলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বর্ধমানের চুরুলিয়ার বাসিন্দা সাড়ে পাঁচ বছরের সাহানা পারভিনের পরিবার। ডেঙ্গির জীবাণু মেলায় গত ১০ অগস্ট তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।