Dengue

রোগী-মৃত্যুর পরেও অমিল রক্তের রিপোর্ট

বেড়াচাঁপার অম্বিকানগরের দীপা সাধুখাঁ জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন গত শুক্রবার। তাঁর সৎকারের পরেও রক্তের রিপোর্ট আসেনি বলে জানান গ্রামেরই তরুণী সায়ন্তিকা মিত্র। দেগঙ্গার মনসুর আলি জ্বর নিয়ে ভর্তি হন বিশ্বনাথপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তিন দিন বাদে ছুটি পেলেও হাসপাতাল থেকে রক্তের রিপোর্ট আসেনি।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

গত কয়েক দিন ধরে ধুম জ্বর ছিল দেগঙ্গার চাকলার বাসিন্দা পদ্ম বিবির (৩৫)। শনিবার রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছিল বারাসত জেলা হাসপাতালে। রিপোর্ট মেলার আগেই শনিবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান ওই মহিলা। বেড়াচাঁপার অম্বিকানগরের দীপা সাধুখাঁ জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন গত শুক্রবার। তাঁর সৎকারের পরেও রক্তের রিপোর্ট আসেনি বলে জানান গ্রামেরই তরুণী সায়ন্তিকা মিত্র। দেগঙ্গার মনসুর আলি জ্বর নিয়ে ভর্তি হন বিশ্বনাথপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তিন দিন বাদে ছুটি পেলেও হাসপাতাল থেকে রক্তের রিপোর্ট আসেনি।

Advertisement

রোগটা আসলে কী, তা জানতেই যদি এত সময় পেরিয়ে যায়, তা হলে ঠিক চিকিৎসা হবে কী করে, উঠছে সেই প্রশ্ন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিই হোক বা ভাইরাল ফিভার, অনেক সময়ে প্লেটলেটের সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় নামতে পারে। ডেঙ্গির জীবাণু শরীরের অন্য অঙ্গেও আক্রমণ শানাতে পারে। ফলে এক দিন পর পর প্লেটলেট পরীক্ষা জরুরি। আরও কিছু পরীক্ষাও দরকার। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থায় একে তো রক্তের নমুনা সংগ্রহের পরে রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। সব রকম পরীক্ষাও হচ্ছে না।

কিন্তু কেন এমন অব্যবস্থা?

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর বলছে, সরকারি জায়গা ছাড়া ডেঙ্গির পরীক্ষা (এনএস-১) না করাতে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনায় জ্বরে উপদ্রুত এলাকার বেশির ভাগ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থাই নেই। বারাসত জেলা হাসপাতাল, বিধাননগর, সাগর দত্ত এবং বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির পরীক্ষা হয়। কোনও কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্লেটলেট পরীক্ষা হচ্ছে। তা বাদে ভরসা বেসরকারি ল্যাব। যদিও তাদের রিপোর্টেই ডেঙ্গি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীও নবান্ন থেকে সে কথা জানিয়েছেন।

যদিও সরকারি আবেদনে সাড়া না দিয়ে হাবরা, দেগঙ্গা, বারাসত, বসিরহাটের বেসরকারি ল্যাবে ভিড় বাড়ছে। চড়া দামও গুনতে হচ্ছে। প্লেটলেট পরীক্ষায় লাগছে ৭০-৮০ টাকা। ডেঙ্গির পরীক্ষায় প্রায় ৭০০-১২০০ টাকা। তা বাদে যাঁরা সরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন, তাঁদের অবস্থা কেমন? বারাসত জেলা হাসপাতালে প্রতি দিন শ’দুয়েক মানুষের ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো যাচ্ছে। জ্বর গায়ে, দুর্বল শরীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরতে হচ্ছে। পরবর্তী তারিখ দেওয়া হচ্ছে। জেলার অন্যত্র হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে এখানে। প্রতি দিন যেখানে হাজার হাজার রোগীর রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ২০০ জনের পরীক্ষা করে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, উঠছে সেই প্রশ্ন। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের অবস্থাও কার্যত একই।

রিপোর্ট পেতে পেতে অনেকের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই গত দু’মাসে বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দেগঙ্গার পদ্ম বিবি তার উদাহরণ। আমুলিয়া পঞ্চায়েতের দাসপাড়ার সুরজিৎ দাসকে (২১) জ্বর নিয়ে আরজিকরে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরে আবার অসুস্থ হন। শনিবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন